বিভাগ পরিবর্তনকারী ইউনিট বহাল চান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা
- শিউলী রহমান
- প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৩০ AM , আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৩০ AM
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। করোনাভাইরাসের কারণে এবং চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। এবার এইচএসসির ফলাফল জেএসসি-এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের আলোকে ঘোষণা দেয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন অনেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।
তারা বলছেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তের ফলে বিভাগ পরিবর্তন করার বিষয়ে এতদিন চলে আসা নিয়মে পরীক্ষা হবে না। নিজ নিজ বিভাগ অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যের নিজ নিজ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এতে যারা একদিন বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিটের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। এরমধ্যে দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি।
ভর্তিচ্ছু এসব শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে তারা এতদিন বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের মতো বিষয় গুরুত্ব দিয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই ইউনিটের পরীক্ষা না হলে তাদেরকে নিজ নিজ পঠিত বিভাগ তথা বিজ্ঞান, বাণিজ্য কিংবা মানবিকের বিষয়গুলোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে তারা এতদিন বিভাগ পরিবর্তনের যে প্রস্তুতি নিয়েছেন তা কোনো কাজে আসবে না। নতুন করে প্রস্তুতি শুরু করারও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় তারা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ঐশি নামে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া এক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা বিভাগ পরির্বনের জন্য গত প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান পড়ছি। এখন আমরা কীভাবে বিজ্ঞান নিয়ে নতুন করে পড়াশোনা করবো, যেহেতু আমি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। কীভাবে আমরা পাস করবো? আমাদের দাবি, বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট থাকতে হবে। আমরা বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানে পরীক্ষা দিতে চাই। না হলে আমাদের জীবন, ভবিষ্যত সব শেষ হয়ে যাবে।’ বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট না থাকলে ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু আরেক ছাত্র বলেন, ‘হঠাৎ করে এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দিয়েছেন। যদি আমরা পরীক্ষা দিতে না পারি, বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট না থাকে তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমরা দুই বছর ধরে একটি বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি, এখন হঠাৎ করে এসে বিজ্ঞানের বিষয়ে কীভাবে পরীক্ষা দেবো?’
এদিকে চলতি বছর অটোপাস দেয়ায় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যায়গুলো ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার যুগ্ম আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সাথে বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি জড়িত নয়।
ড. মীজানুর রহমান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থীকে তার প্রাপ্ত নম্বর জানিয়ে দেয়া হবে। রেজাল্ট প্রকাশের পর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ওয়েবসাইটে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করবে। এই নীতিমালা অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ পাবেন।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা কোনো ইউনিটের পরীক্ষা নেয়া হবে না। বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা নেয়া হবে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগেই পরীক্ষা দিতে হবে।’
যে সকল শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা বিপাকে পড়েছেন, তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাধিক বছর পড়ালেখা করে এসেছে। তার নিজ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সমস্যা কোথায়? পরীক্ষার পর ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি ফরম পূরণের সময় নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্ধারণ করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বিজ্ঞানে পড়তে না চায় তাহলে পছন্দক্রমে সে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চায় সেটি উল্লেখ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি নীতিমালার উপর। ভর্তি নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে পারলে ওই শিক্ষার্থী নিজের পছন্দক্রমের বিষয় নিয়ে পড়তে পারবেন। এতে ওই শিক্ষার্থীর বিভাগ পরিবর্তন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’
এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভর্তি প্রক্রিয়ার উদাহরণ টেনে মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের মানবিক বিভাগের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সিট সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৮০টি আসন এইচএসসিতে মানবিক বিভাগ নিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। বাকি ২০টির মধ্যে ১০টি বিজ্ঞান বিভাগের আর ১০টি আসন বরাদ্দ থাকে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘একজন কমার্সের শিক্ষার্থী যদি পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায় তাহলে ভর্তি ফরম পূরণের সময় তাকে পলিটিক্যাল সায়েন্স বিষয়টি পছন্দক্রমে রাখতে হবে। সে যদি পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগে ভর্তির শর্ত পূরণ করতে পারে তাহলে ওই বিষয় নিয়ে সে পড়তে পারবে।’