বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ: দিনশেষে ‘আনসোশ্যাল’রাই বিজয়ী হবে

ছবিতে লেখক মইনুল হাছান
ছবিতে লেখক মইনুল হাছান  © টিডিসি ফটো

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। সবচাইতে বেশি প্রভাব পড়েছে এবার যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের উপর। এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে অনেক শিক্ষার্থীরই বই-পুস্তকে ধুলো জমে গেছে। সেই অনিশ্চয়তার যখন অবসান হলো তখন শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা নামক এক মহাযুদ্ধের সম্মুখীন। অবস্থাটা এমন যেন শিয়ালের হাত থেকে বাঁচার পর এখন বাঘের মুখোমুখি।এই বাঘের হাত থেকে বাঁচার যুদ্ধপ্রস্তুতির অস্ত্র হলো পড়াশুনা,অধ্যাবসায় আর কৌশল।

এবারের রেজাল্টের হিসেব-নিকেশের একটি জটিলতা তৈরী হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় জেএসসি এবং এসএসসির রেজাল্ট সমন্বয় করে একটি জিপিএ দেওয়া হবে। এই জটিলতার মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই জিপিএর উপর নাম্বার কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। উপযুক্ত মূল্যায়নের জন্য বাকী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাই ভাবছে। এই পরিস্থিতিতে তোমরা যারা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছো তাদের জিপিএ নিয়ে চিন্তা করাটা বোকামিই হবে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিবে যেন উপযুক্ত মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যোগ্যতম শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পায়। তোমাদের দায়িত্ব নিজেকে প্রস্তুত করা। যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা।

এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। অফলাইনে কোচিং বন্ধ থাকার কারণে অনেকেরই প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। অনলাইনে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখা দুঃসাধ্য। এ কারণে বিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ টপিক ভালোভাবে বোঝা কঠিন হয়ে যায়৷ এটাও মাথায় রাখতে হবে সব পরীক্ষার্থীরই একই পরিস্থিতি। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যারা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারবে ভর্তিযুদ্ধে এগিয়ে থাকবে তারাই।

এবার আসি রেজাল্টের প্রসঙ্গে

জেএসসি এসএসসির জিপিএ কম?
তো কি হয়েছে?
এত ভেঙে পড়ছো কেন?
আসল লড়াই তো সামনে!

পিএসসি থেকে শুরু করে জেএসসি, এসএসসি সবগুলো পরীক্ষাতেই সব সাব্জেক্টে এ+ মানে গোল্ডেন নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে নিজের আসন নিশ্চিত করা না যায়; তাহলে এই রেজাল্ট কোন কাজেই আসবে না। গোল্ডেন না পেয়ে বা কম জিপিএ নিয়ে তোমার চাইতে ভালো পজিশনে অনেকেই যাবে। আবার অনেকেই ভালো জিপিএ নিয়ে কোত্থাও চান্স না পাওয়ার দলে রয়ে যাবে৷

অনেক ভালো রেজাল্ট নিয়ে অনেকেরই যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলে চান্স হবে না ঠিক তখনই তুমি ভাল একটা সাব্জেক্টে লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বা যদি তোমার দম থাকে!

তুমি নিজেকে যে জায়গায়, যেখানে দেখতে ভালবাসো সেখানে থেকেই আমি সব চাইতে ভালো করতে পারবে। একটা জীবনে নিজের সেটিসফেকশন টাই আসল। নিজে ঠিক করো নিজেকে কোন পজিশনে দেখতে চাও।যদি থাকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও মনোবল,যদি ভর্তি পরীক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টা যথাযথভাবে ব্যাবহার করতে পারো তবে ভর্তি পরীক্ষা নামক মেধার খেলায় জিতবে তুমিই। তোমার জন্য হাতছানি দিচ্ছে দেশসেরা মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়ে নিজের ও পরিবারের স্বপ্নপূরণের অপার সম্ভাবনা।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তোমার জন্য আসন পেতে রেখেছে।

শোন,
তোমাকেই বলছি, যদি শেষ রাউন্ডে জয়ী হতে চাও,
চাও যদি বিজয়ের হাসি হাসতে,
যদি থাকে হোঁচট খেয়েও গা ঝেড়ে দৌঁড়ে বিজয়ী হওয়ার দৃঢ় মনোবল,
তবে শুরু করে দাও পুরোদমে পড়াশোনা।
ছাড়ো ফেসবুক, ছাড়ো আড্ডাবাজি..

শুধু ২ মাস। এই ২ মাসের পরিশ্রমই তোমাকে সফল ও যোগ্যদের কাতারে স্থান দিবে। মনের সাথে কথা বলো। আর কারো পরামর্শ নিতে যেও না।

তোমার যদি মনে হয় তুমি মেডিকেল/সায়েন্সের সাবজেক্টে লড়ার জন্য খুব বেশি প্রস্তুত নও তাহলে আজই বদলাও তোমার সিদ্ধান্ত। সবাই সবকিছু হতে পারে না। তোমার পরিবার আর শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই হয়তো চাইবে তুমি মেডিকেলে পড়ো, ডাক্তার হও । তুমি নিজেকে নিয়ে যা স্বপ্ন দেখো তাতেই চেষ্টা করো। যথাযথ প্রস্তুতি আর অধ্যাবসায় থাকলে সফল হবে ইনশাআল্লাহ ।

টেকনিক্যালি পড়ালেখা করতে হবে: ঢাবির ঘ ইউনিটে(বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটে) সায়েন্সের ছাত্রদের জন্য প্রায় ১২৫০ টি সিট আছে। সময় এবং নিজের সামর্থ্যানুযায়ী চেষ্টা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দামি লোগোটা তোমার অস্তিত্বের সাথেই জুড়ে যাবে আজীবনের জন্য। তাছাড়া চবি, রাবি, জবি, জাবিতেও আছে প্রচুর আসন।

তুমি যদি এই শেষ সময়টুকু বাংলা, ইংলিশ ও সাধারণ জ্ঞান পড়ে খুব ভাল প্রস্তুতি সারতে পারো, তাহলে তোমার আসন সুনিশ্চিত। পরীক্ষা শেষে সবাই জানতে চাইবে তুমি কোথায় চান্স পেয়েছো। এমন কিছু করো না, যাতে সবাই নাক সিঁটকায়। মেডিকেলের প্রস্তুতি নিয়েছি তাই ভার্সিটিতে চান্স পাই নি টাইপের অজুহাত কেউ বিশ্বাস করবে না তখন।

তোমার মেধার মূল্যায়ন করবে তখনই যখন তুমি ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। বিশ্বাস করো তোমার আশেপাশের অনেকেই তাঁর প্রমাণ।

খুব সতর্কতার সাথে টেকনিক্যাল হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে কিন্তু। দেখবে তোমার যেসব বন্ধু খুব পড়াশোনা করে, যারা মোবাইল, প্রেম, ফেসবুক, আড্ডাবাজি ছেড়ে টেকনিক্যালি পড়াশোনা করে ঢাবি/বুয়েট/মেডিকেল/চবি/রাবিতে চান্স পাবে; তাদেরকেই এত পড়ে বলে তোমরা আঁতেল বলতা! কিন্তু দিনশেষে ওই ‘আনসোশ্যাল’ আঁতেলরাই বিজয়ী হয়। ওরাই মাথা উঁচু করে বাঁচে।

তাই বলছি, এই দু’মাসের জন্য প্রয়োজনে আঁতেল হও।

ছাড়ো ফেসবুক, ছাড়ো আড্ডা...
সবকিছু থেকে ছুটি নাও দুমাসের...
পড়... পড়... এবং পড়!

শুভকামনা রইল পড়ুয়া, পরিশ্রমীদের জন্য। দেখা হবে বিজয়ে...

লেখক: মইনুল হাছান শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট অফ ক্রিমিনোলোজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ