এবার ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ প্রভাব ফেলবে না

ইসরাত জলিল মীম
ইসরাত জলিল মীম  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ‘খ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছিলেন ইসরাত জলিল মীম। ভর্তি হয়েছেন আইন বিভাগে। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মোতাহার হোসেন। সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন তিনি। চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো—

টিডিসি: বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাওয়ার জন্য আপনি কীভাবে পড়েছেন, দৈননিন্দ রুটিন কী ছিল?

ইসরাত জলিল মীম: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়াকে লক্ষ্য বিবেচনা করে পড়াশোনা করতে হলে যে পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর বলে আমি মনে করি তা হচ্ছে, পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনা করা। অল্প সময়ে একটা বিশাল পরিসরের সিলেবাস শেষ করার জন্য বাস্তবায়নযোগ্য একটা রুটিন তৈরি করাটা অপরিহার্য। এডমিশন টেস্টের সিলেবাস বা পরীক্ষায় কি ধরনের প্রশ্ন আসে তার পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়ার জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে অনুধাবন করা উচিত।

প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো ধারনা তৈরি হয়ে গেলে তারপর একটা পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত কি কি পড়তে হবে, কীভাবে পড়তে হবে, কতটুকু পড়তে হবে, কতটুকু পড়া সম্ভব আর কতটুকু পড়া সম্ভব না তা বিবেচনা করে। তারপর নিজস্ব অভ্যাস আর পরিবেশ অনুযায়ী রুটিন তৈরি করা উচিত। আমার ভোরে উঠে পড়ার অভ্যাস। তাই আমি আমার দৈনন্দিন পড়াশোনার সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সকালে শেষ করার চেষ্টা করি।

টিডিসি: নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে ঢাবি। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার উপায় কি?

ইসরাত জলিল মীম: লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতে বেশি আপডেটেড থাকা উচিত। আর এটা শুধু লিখিত নয়, নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার জন্যও প্রযোজ্য। দৈনিক সংবাদপত্রে চোখ রাখতে হবে। আর বেশি বেশি লিখার পরিচর্যা করতে হবে।

টিডিসি: বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার কোনো সহজ টেকনিক আছে?

ইসরাত জলিল মীম: বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সবচেয়ে সহজ যে টেকনিক তা হচ্ছে, পরিকল্পনামাফিক পরিশ্রম করা। এর চেয়ে সহজ আর কার্যকরী কোন উপায় নেই।

টিডিসি: শিক্ষার্থীদের মেধাভেদে পড়ার তারতম্য হয়। তারপরও দৈনিক কত ঘন্টা না পড়লেই নয়?

ইসরাত জলিল মীম: ছাত্র-ছাত্রীদের একজনের মেধার আরেকজনের সাথে মেধার তুলনা না করাটাই শ্রেয়। একেকজন একেক বিষয়ে পারদর্শী হয়। সবাই যে একই বিষয়ে মেধার পরিচয় দিবে তা নয়। কারো বুঝতে পারার ক্ষমতা অনেক ভালো, কেউ খুব ভালো মুখস্থ করতে পারে। তাই সময় দিয়ে মেধা পরিমাপ না করে দক্ষতা দিয়ে নিজেকে যাচাই করা উচিত।

টিডিসি: কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? যাদের কোচিং করার সুযোগ নেই তারা কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে?

ইসরাত জলিল মীম: কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ভর করে ছাত্র-ছাত্রীরা কতটুকু নিজে থেকে পড়তে আগ্রহী তার উপর। নিজে থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে পড়োশোনা করলে কোচিংয়ের ভূমিকা অনেক নগন্য হয়ে যায়। দিক-নির্দেশনা প্রদান এবং অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে হয়ত কোচিং প্রতিষ্ঠান অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে। কিন্তু নিজস্ব প্রচেষ্টা না থাকলে তা কোন কাজে আসে না।

টিডিসি: গাইড বই নাকি টেক্সট বই- কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

ইসরাত জলিল মীম: টেক্সট বই আর গাইড বই দুটোরই প্রয়োজনীয়তা আছে, কিন্তু টেক্সট বইকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

টিডিসি: কী কী বই না পড়লেই নয়? কিছু বইয়ের নাম জানতে চাই।

ইসরাত জলিল মীম: যে বইগুলো বাদ দিয়ে প্রস্তুতি অসম্ভব তা হচ্ছে: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র বই, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র বই, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি প্রথম পত্র বই, সাধারণ জ্ঞানের বই। পাশাপাশি বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় সংবাদপত্র পড়তে হবে।

টিডিসি: জিপিএ-তে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে?

ইসরাত জলিল মীম: এবার জিপিএ ভর্তি পরীক্ষায় খুব বেশি বড় আকারে প্রভাব ফেলছে না। তবুও যারা জিপিএর দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে, তাদের আরেকটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত প্রস্তুতি নিয়ে।

টিডিসি: যারা একই সাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নেয়, তাদের জন্য পরামর্শ কী?

ইসরাত জলিল মীম: আমি একটা ইউনিটেই পরীক্ষা দিয়েছি। অনভিজ্ঞতা নিয়ে উপদেশ না দেয়াই শ্রেয়।

টিডিসি: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণকালে সাধারণত কোন ভুলগুলো শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দেয়?

ইসরাত জলিল মীম: ভর্তি পরীক্ষায় প্রস্তুতির সময়ে অনেক বিষয়ই পিছিয়ে দিতে পারে। আমাকে দিয়ে চান্স পাওয়া হবে না, একটি জনপ্রিয় ভুল ধারণা। কমবেশি সবাই এই ধারণার ভুক্তভোগী। এ ধারণা পোষণ করে পড়াশোনার গতি কমিয়ে দিলে তা অনেকটা পিছিয়ে পড়তে হয়। অলসতা করা, গাফিলতি করে শেষ সময়ে পড়ার জন্য পড়া জমিয়ে রাখা, অবাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা করে তা অনুসরণ করতে না পারা ইত্যাদি ভুল না করে শুরু থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে পড়তে হবে।

টিডিসি: পরীক্ষা চলাকালীন ১ ঘন্টা/দেড় ঘন্টায় কোন ভুল করা উচিত নয়?

ইসরাত জলিল মীম: পরীক্ষার সময় যে ভুলটা একদম করা উচিত না তা হচ্ছে- ভয় না পেয়ে শান্ত হয়ে পরীক্ষা দেয়া। আর এটা অনেক কঠিন। প্রশ্ন ভালোমন্দ যেমনই হোক, মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শান্তভাবে, খাতায় নাম লিখা থেকে শুরু করে শেষ উত্তরটা ঠিকভাবে দেয়া পর্যন্ত একই মনোবল রাখতে হবে।

টিডিসি: সর্বশেষ প্রশ্ন, প্রথমবার যারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে তাদের মাঝে ভয় বেশি কাজ করে এবং এর ফলে অনেকেই ব্যর্থ হয়। এই ভয় দূর করার ক্ষেত্রে করণীয় কি?

ইসরাত জলিল মীম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবারই ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ আছে। ভয় থেকে অনেক ভুল হতে পারে। ভয় কখনো কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। ভয় পেয়ে কোনো উপকার এমনিতেও হবে না। ভয় পেয়ে নিজের একমাত্র সুযোগ হারোনার কোন মানে হয় না। সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে নিজের উপর।

টিডিসি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ইসরাত জলিল মীম: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ


সর্বশেষ সংবাদ