বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি: একটু ভুলেই ভেঙে যাবে জীবনের স্বপ্ন

সাদেকুর রহমান সানি
সাদেকুর রহমান সানি  © টিডিসি ফটো

শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার পর এডমিশনের সময়টা। এই সময়ে কেউ পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলে, ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে যায়। আবার কারও একটু ভুলে স্বপ্ন ভেঙে যায়। তাই মহামূল্যবান সময়টা কাজে লাগাতে পারলে তোমাদের ছোটবেলার স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ নিতে পারে। চান্স পাওয়ার পর তোমাদের পদচারনায় মুখর হবে স্বপ্নের ক্যাম্পাস। চান্স পেতে হলে একটা বিরাট প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মেধার যুদ্ধে হারাতে হবে অনেকজনকে। এইবার যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি এবং সবাই উত্তীর্ণ তাই বলা যায়; এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যাচ্ছে। এবার চলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কিছু কথা বলি।

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির প্রথম কাজ হচ্ছে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে কী কী পড়তে হবে তা বুঝা। কারণ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় কম। অল্প সময়ে প্রস্তুতি নিতে হলে আগে গুরুত্বপূর্ণ টপিকসগুলো পড়ে শেষ করতে হবে। কিছু কিছু টপিকস থেকে প্রায় প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে, সেগুলো শেষ করতে হবে।

অনেকেই একটা কমন প্রশ্ন করে যে এসময় কতঘন্টা পড়তে হবে। ১৫ ঘন্টা/১৮ ঘন্টা পড়তে হবে এমন কোন কথা না। তোমার প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করতে হবে; সেটা যতক্ষণ লাগে। একজন শিক্ষার্থীরই বোঝা উচিত কোন বিষয়ে কতটুকু পড়াশোনা করতে হবে।

এই সময়ে অনেকে সঠিক দিক-নির্দেশনা পায় না। এজন্য তোমার একজন সিনিয়র ভাই/আপু থাকলে ভালো হয়, যে গাইডলাইন দিতে পারব । অথবা কোচিং সেন্টারগুলো এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। কোচিং সেন্টার আমাদের পড়ার ক্ষেত্রে শুধু দিক নির্দেশনা দিতে পারে; কিন্তু চান্স পাওয়ার জন্য পড়াশোনাটা কিন্তু তোমার নিজেরই করতে হবে।

পড়াশোনায় ত্রুটি রাখা যাবে না এবং নিজেকে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। এই কয়েকদিন মোবাইল, ফেসবুক, প্রেম বন্ধ করে পড়াশোনায় ফোকাস নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিক অংশে ৩০ নাম্বার, লিখিত অংশে ৫০ নাম্বার থাকবে। যেহেতু লিখিত অংশে বেশি নাম্বার থাকবে তাই লিখিত অংশের জন্য আলাদা নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে কিছু কিছু বিষয় মুখস্থ করতে হবে, নিজের সৃজনশীলতা বাড়াতে হবে। লিখিত অংশে ভালো করার জন্য পাঠ্যবইয়ের বিকল্প নেই। আবার এবার যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি, তাই ভর্তি পরীক্ষায় বই থেকে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতির জন্য তাদের প্রশ্নপদ্ধতি ও মানবন্টনের ভিত্তিতে প্রস্তুতি নিতে হবে।

শেষ মুহূর্তে নতুন কিছু পড়া উচিত নয়। আর পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, নার্ভাস হওয়া যাবে না। মাথায় রাখতে হবে এটা আর পাঁচটা সাধারণ পরীক্ষার মতোই। ভর্তি পরীক্ষায় ভুল দাগালে নেগেটিভ মার্ক থাকে। তাই অনুমানভিত্তিক দাগানো পরিহার করতে হবে। এইজন্য বাসায়/ কোচিং এ মডেল টেস্ট দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে এবং যেগুলো সমস্যা সেগুলো সমাধান করতে হবে।

শেষ কথা, নিয়মিত নামাজ/প্রার্থনা, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া আর শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। আর কখনো হতাশ বা আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না। মনে রাখবে— নিরলস পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সকল ভর্তিচ্ছু পরিক্ষার্থীর জন্য শুভকামনা রইলো।

লেখক: সাদেকুর রহমান সানি। শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ১৩ তম ব্যাচ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।