ট্রায়াল ছাড়াই অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা, সমর্থন নেই অধিকাংশের

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস পাঠক মতামত
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস পাঠক মতামত  © টিডিসি ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অটোপাস করা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্যরা। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ নূরের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে এবং তাতে অধিকাংশই সমর্থনও দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে ট্রায়াল বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় সমালোচনার পাল্লাই ভারী বেশি।

চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজার। তাদের এই পরীক্ষা না হওয়ায় সবাই উত্তীর্ণ হচ্ছেন। ফলে এবার সব শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। তবে সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ হাজার আসনে চান্স পেতে মূল প্রতিযোগিতা হবে। সেক্ষেত্রে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অনলাইনে কীভাবে স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে, তা নিয়ে মূল শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করা শিক্ষার্থী এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান, যাদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই, তারা কীভাবে এই পরীক্ষায় অংশ নেন।

অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এমন বাস্তবতায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের নিকট জানতে চাওয়া হয়েছিল এই সিদ্ধান্তের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে তাদের মতামত কী? সেখানে সিংহভাগ পাঠন অনলাইন ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে তাদের মতামত জানিয়েছেন। অনেকে দেরিতে হলেও সশরীরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত করে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। এতে বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মেধাবীদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে বলে মত দিয়েছেন। অনেকে আবার উপাচার্যদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন। জালিয়াতির আশঙ্কাও করেছেন অনেক পাঠক।

ইমরান সরকার নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘খুবই বাজে একটি সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটি একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিলে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। তাছাড়া নানা রকম অসদুপায় অবলম্বন করে ডিজিটাল জালিয়াতি বৃদ্ধি পাবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা, যা একজন শিক্ষার্থীর জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে, তা অনলাইনে নেওয়া অদূরদর্শীতার পরিচয় হবে।’

আহমেদ হোসাইন সাজিদ লিখেছেন, ‘আমি বিপক্ষে। কারণ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভর্তি পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। তাছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক অনৈতিক উপায়ে পরীক্ষা দেওয়ার একটা অপচেষ্টা করতে পারে। তবে একটা কাজ করা যেতে পারে, তাহলো অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে প্রথমেই একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী বাদ দেওয়া যেতে পারে। বাকিদের পরবর্তীতে অফলাইনে পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।’

আলেয়া হকের মতে, ‘অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা চাই না। ভর্তি পরীক্ষা এখনই নিতে হবে, এমন তো কোনো মানে নেই। কয়েকটা মাস অপেক্ষা করার পর, পরিস্থিতি বিবেচনায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হোক।’

অনলাইন ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে মত দিয়েন আসিফ পারভেজ প্রাচুর্য লিখেছেন, ‘যেখানে ১৫/২০ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে মা-বাবা তাদের সন্তানকে ডাক্তার বানাতে চায়। সেখানে এই অনলাইনে মা-বাবা, শিক্ষার্থী সবাই মিলেই চুরির আশ্রয় নেবে না যে, তার গ্যারান্টি কি? এতজন পরীক্ষার্থীকে মনিটর করা কি আদৌ সম্ভব? ইন্টারনেট এর নিম্ন স্পিডের এই দেশে অনেক যোগ্যরা বঞ্চিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গুচ্ছ পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নেওয়া হোক এবং তা সশরীরে। যে যেই জেলা থেকে রেজিস্ট্রেশন করবে, সেই জেলায়ই সিট বসানো হোক। এতে করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করার প্রয়োজন পড়বে না এবং পরীক্ষার সংখ্যাও কমে আসবে।’

উপাচার্যদের সমালোচনা করে মো. শরীফ হাসান লিখেছেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনুধাবন করতে পেরেছে যে, অনলাইনে এক্সাম হলে প্রচুর দুর্নীতি হবে। কিন্তু এত উচ্চশিক্ষিত চৌকস ভিসিগুলোর মাথায় কেন এটা বুঝতে পারছে না, নাকি মাথা মোটা হয়ে গেছে।’

কাওসার আলম লিখেছেন, ‘এইটাতে কেউ লাভবান না হলেও কিছু সিনিয়র ভার্সিটির বড় ভাই, যারা কোচিংগুলোতে ক্লাস নেয় ওরা লাভবান হবে। প্রক্সি দিয়ে লাখ টাকা কামিয়ে নেবে।’ মোহাম্মদ তৌহিদ ইসলামের মতে, ‘অনলাইনে নিয়ে ভর্তির আগে আবার সীমিত আকারে লিখিত নেয়া হোক।’

সীমা আক্তার মন্তব্য করেছেন, ‘অবশ্যই বিপক্ষে। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা মানি না।’

জানা গেছে, এবার তিন ক্যাটাগরিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এবার ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় আগের নিয়মেই এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতেই ভর্তি করা হবে। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং পরিচালনায় স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।

সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা হবে। করোনার কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষা এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। তা নাহলে উচ্চতর শিক্ষায় কম মেধাবীদের ভিড়ে মেধাবীরা হারিয়ে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ