সেই জান্নাতের ভর্তি নিয়ে মুখোমুখি বেরোবি শিক্ষকরা
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ২০১৯-২০ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন, তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং বি-ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকবৃন্দ। এদিকে এ মানববন্ধনকে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আরেকটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সচেতন শিক্ষকবৃন্দের পক্ষ থেকে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
সচেতন শিক্ষকদের মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, আমরা বার বার প্রশ্ন তুলছি, এ তদন্ত কমিটি যৌক্তিক তদন্ত কমিটি নয়। এই তদন্ত কমিটি আমরা মানি না। যেহেতু উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে ওই ভর্তি পরীক্ষার্থীর একধরণের যোগাযোগ আছে আর উপাচার্য ওই অনুষদের ডিন এবং ভর্তি পরীক্ষায় সমন্বয়ক তিনিই নিযুক্ত করেছেন। তার মানে ওই সমন্বয়ক তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
তিনি বলেন, ওই মেয়ে যে বিভাগে ভর্তি হয়েছেন সেই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য। সুতরাং কোন না কোন ভাবে উপাচার্য মহোদয়ের দিকে একটা আঙ্গুল যেতে পারে বলে আমরা মনে করি। এমন কারও দ্বারা তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক যেকোন জায়গায় হাত দেয়ার সক্ষমতা যাদের আছে। একটি জালিয়াতি যদি হতে পারে, তাহলে একশতজনও হতে পারে। সুতরাং বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হোক। এটি আমাদের দাবি।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘যে শিক্ষক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে অবগত নন, কেবলি যোগদান করেছেন, এরকম একজনকে কিভাবে এত বড় ঘটনার তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা যায়? আইন হচ্ছে নিচের পদের কোন শিক্ষক উপর কারও তদন্ত করতে পারবেন নাা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় কেন এত অস্বচ্ছতা? এত অস্বচ্ছতা কখনই ছিল না। আমরা আশংকা করছি এই ভর্তি পরীক্ষায় বড় ধরনের দুনীতি হয়েছে।’
নীলদলের সাধারণ সম্পাদক আসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ, সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবীর সুমন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. মতিউর রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান, নীলদলের সভাপতি ড. নিতাই কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক আসাদ মন্ডল, রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এইচ এম তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে, সচেতন শিক্ষকবৃন্দের মানববন্ধনের পর ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধন করেন উপাচার্যপন্থীদের একটি গ্রুপ।
উল্লেখ্য, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষিকা ইমরানা বারীর ছোটবোন সামাজিক অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করলেও অন্য দুই ইউনিটে সর্বনিম্ন নম্বর পেয়ে ফেল করে। ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) লিখিত আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকবৃন্দ। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ওই ছাত্রীর ভর্তি স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।