হোটেল-রেস্টুরেন্টে খুবি ভর্তিচ্ছুদের বিনা খরচে থাকা-খাওয়া
- শরিফুল ইসলাম, খুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:৪২ PM , আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:৫৫ PM
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের (স্নাতক) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে শনিবার। ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে খুলনা নগরীর একটি আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। নতুন জায়গায় নতুন পরিবেশে অনেকে আবাসন ও থাকা খাওয়ার সম্যসায় পড়ে। আবার অনেকে টাকা পয়সা হারিয়ে ফেলে, হোটেলগুলোতে চড়া দামে খাদ্যদ্রব কিনতে হিমশিম খায়। এসব সমস্যার সমাধান করে আসছে খুলনা নগরীর বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও তাবলীগ জামায়াতের সাথীরা।
খুলনা নগরীর তিন তারকা হোটেল টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ টানা পাঁচ বছর ধরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ও অভিভাবাকদের ফ্রি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এবারও ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী ও অভিভবাকের বিনামূল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার্থীদের থাকা ও পড়াশোনার সুবিধার জন্য তিনটি কনফারেন্স কক্ষ ও সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কোয়েট হল ছেড়ে দেয়। দুইটিতে ছেলে ও একটিতে মেয়েদের থাকার সুব্যবস্থা ছিল।
হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মানুষ মানুষের জন্য। সমাজের দায়িত্ববোধ থেকে আমাদের এ কার্যক্রম। মূলত শিক্ষার্থীরা থাকা খাওয়া নিয়ে ভাবনা চিন্তায় পড়ে যান। শিক্ষার্থীরা সুস্থ ও সুন্দরভাবে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে এজন্য এমন সুযোগে সুবিধা দিয়ে থাকেন।
উল্লেখ, গত ১৮ অক্টোবর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েটের) ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ৭৬৫ জন শিক্ষার্থী ও অভিভবাকের এমন সুবিধা দিয়েছিল হোটেল কতৃপক্ষ।
খুবির প্রধান ফটকের বিপরীতে অবস্থিত দারুচিনি রেস্টুরেন্ট এন্ড ক্যাফে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে অসচ্ছ্বল, দরিদ্র, সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য প্রথমবারের মত বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করেন। রেস্টুরেন্টটির সেবা সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেষ হয়। সরেজমিনে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড় রেস্টুরেন্টটিতে। শিক্ষার্থী ও অভিবাকেরা এমন সুযোগ সুবিধা পেয়ে উচ্ছ্বসিত।
রেস্টুরেন্টটির মালিক মাহমুদুল ইসলাম মিঠুন বলেন, অপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে অনেকে টাকা পয়সা হারিয়ে ফেলেন, আবার অর্থ সংকটের কারণে চড়াদামে খাবার ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হয়। এজন্য শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের যাতে খাবার নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য প্রথমবারের মতো আমরা বিনামূল্যে খাদ্য সরবারহের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রত্যেক বছর আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
খুবির খান জাহান আলী আবাসিক হলে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের জন্য হল প্রশাসন হলের অভ্যন্তরে ৫৫ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করেন। যেসব শিক্ষার্থীদের খুলনার কোথাও আবাসন ব্যবস্থা হয়নি তারাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
খান জাহান আলী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. সমীর কুমার সাধু বলেন, গত বছরের ন্যায় এবারও আমরা শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। ভবিষ্যৎতে আমাদের এ কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে করার চেষ্টা করব। একই সাথে হলে আগত শিক্ষার্থীদের শুভ কামনা জানান।
এছাড়াও তাবলিক জামাতের সাথীরা যেসব কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে তার আশেপাশের নগরীর মসজিদগুলোতে প্রায় ৮শতাধিক শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও আইসিটি সেলের তথ্যমতে, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ইউনিটের অধীন ৮টি স্কুলের অন্তর্ভূক্ত ২৯টি ডিসিপ্লিনে ১২১৭ আসনের (মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও উপজাতি কোটাসহ) বিপরীতে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৭ জন। অনলাইনে ৩২ হাজার ৬ শত ৩৬ জন আবেদন করেছিল। আজ কোন ধরনের অপ্রতীকর ঘটনা ছাড়াই সফলভাবেই চারটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।