একক ভর্তি পরীক্ষা: কম্পিউটারের পরিবর্তে খাতায় মূল্যায়ন, বাধ্যতামূলক হচ্ছে বাংলা-ইংরেজি
নতুন পদ্ধতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এজন্য পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে খাতার মাধ্যমে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ে উত্তর করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রথমদিকে একক ভর্তি পরীক্ষায় কম্পিউটার বেজড টেস্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। তবে গ্রামীণ জনপদে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের এ পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে—এমন চিন্তা থেকে আপাতত কম্পিউটার বেজড টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরীবর্তে প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ খাতার মাধ্যমে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একক ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত মূল কমিটির আহবায়ক ইউজিসি সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. হাসিনা খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) এ কমিটির একটি সভা রয়েছে। আশা করছি, জুলাই মাসের মধ্যে মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা যাবে।
পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে খাতার মাধ্যমে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ে উত্তর করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে একক ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালা তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সে কমিটির সুপারিশের আলোকে একক ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে চার সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি মূল্যায়ন পদ্ধতির একটি খসড়া তৈরি করেছে। এ খসড়া চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি তৈরির সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ খাতার মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে এমসিকিউ এবং লিখিত দু’টি অংশই থাকতে পারে। এছাড়া তিন বিভাগের জন্য আলাদাভাবে তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার তিনটি ট্র্যাকের ক্ষেত্রেই বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন থাকবে। ভাষার দক্ষতা যাচাই করতে এ দুটি বিষয়ের উত্তর করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
বাংলা ও ইংরেজির উত্তর বাধ্যতামূলক হলেও বিভাগভিত্তিক অন্যান্য বিষয়েও পরীক্ষায় উত্তর করতে হবে। বিভাগভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পঠিত বিষয় প্রাধান্য থাকবে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পদার্থ, রসায়ন ও গণিত বিষয়ে প্রশ্ন বেশি থাকবে। এর পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজিও থাকবে।
একক ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি সংক্রান্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের (বিএসি) সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, মূল্যায়ন পদ্ধতির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি আরও যাচাই-বাছাই করা দরকার। আমরা কাজ করছি। কিছু কিছু বিষয় নির্দিষ্ট করা গেলেও আরও কাজ করতে হবে। মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
আরো পড়ুন: কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার আসনবিন্যাস প্রকাশ, ভর্তিচ্ছু ৭৫ হাজার
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ নেয় ইউজিসি। এজন্য একটি খসড়া অধ্যাদেশও তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তা অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের সম্মতি না মেলায় সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এখন নতুন করে একক ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তদারক সংস্থাটি।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের কাঠামো, এর চেয়ারম্যান পদ ও ব্যয়ের ক্ষমতাসহ বেশকিছু বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের জোর আপত্তি থাকায় আলোর দেখা পায়নি ইউজিসির পাঠানো খসড়া অধ্যাদেশ। এখন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী অধ্যাদেশের পরীবর্তে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে কমিশন।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের ব্যয়ের ক্ষমতায়ও কিছু পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে।