শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা ‘অসম্ভব’

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদরাদের দায়িত্বে থাকা এই সংস্থাটি।

সোমবার (৩ জুন) ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তারা। ইউজিসি বলছে, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে ‍মূল বাধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ঢাবিকে এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হলে শিক্ষামন্ত্রীকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাবিকে যুক্ত করা গেলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সহজেই এ প্রক্রিয়ার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

একক ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো এবং পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক করতে বর্তমানে দুটি কমিটি কাজ করছে জানিয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘব করতে হলে একক ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিরোধিতা না করলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেই একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হত। তবে ঠুনকো অজুহাতে অধ্যাদেশ আটকে দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াই আটকে দেওয়া হয়েছে। এটি চালু করতে হলে শিক্ষামন্ত্রীকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হবে না—ইউজিসি কর্মকর্তা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় বাস্তবায়নে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল ইউজিসি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে চেয়েছিল ইউজিসি। এজন্য একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন না করে নতুন করে খসড়া তৈরির কথা জানায়।

ইউজিসি বলছে, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কঠোর হতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কিংবা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ছাড়া এটি আলোর মুখ দেখবে না। দ্রুত এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষেও একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না। 

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিরোধিতা না করলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেই একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হত। তবে ঠুনকো অজুহাতে অধ্যাদেশ আটকে দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াই আটকে দেওয়া হয়েছে। এটি চালু করতে হলে শিক্ষামন্ত্রীকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হবে না।

একক ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে তৈরিকৃত খসড়ায় দুই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো- কম্পিউটার বেজড টেস্ট। আর অন্যটি হলো- প্রচলিত পদ্ধতিতে অর্থাৎ খাতার মাধ্যমে মূল্যায়ন। প্রাথমিকভাবে খাতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। পরবর্তীতে কম্পিউটার বেজড মূল্যায়নের দিকে যাবে কমিটি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, একক ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে গঠিত সাব-কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় কম্পিউটার বেজড টেস্ট নাকি পেপার বেজড টেস্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সাব কমিটি। এছাড়া তৈরিকৃত মূল্যায়ন খসড়ায় বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করতে বলা হয়েছে। 

পরীক্ষা পদ্ধতির খসড়া চূড়ান্ত করতে সাব কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে একজন ঢাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) এবং অন্যজন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর)। এছাড়া রাবির যে প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে, তিনি বর্তমানে ঢাকার বেসরকারি গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত রয়েছেন।

এ বিষয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত মূল কমিটির দায়িত্বে থাকা ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। ঈদের পর আগামী ২৩ জুন পুনরায় সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া চূড়ান্ত করা হতে পারে।

সূত্র বলছে, একক ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে তৈরিকৃত খসড়ায় দুই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো- কম্পিউটার বেজড টেস্ট। আর অন্যটি হলো- প্রচলিত পদ্ধতিতে অর্থাৎ খাতার মাধ্যমে মূল্যায়ন। প্রাথমিকভাবে খাতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। পরবর্তীতে কম্পিউটার বেজড মূল্যায়নের দিকে যাবে কমিটি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

পরীক্ষা পদ্ধতির খসড়া তৈরির সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে তিনটি ট্র্যাকে পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখা। তিনটি ট্র্যাকের ক্ষেত্রেই কমন কিছু বিষয় থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ভাষা। এ বিষয়ে দক্ষতা নির্ণয় করতে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর করতে হতে পারে।

বাংলা ও ইংরেজির উত্তর বাধ্যতামূলক হলেও বিভাগভিত্তিক অন্যান্য বিষয়েও পরীক্ষায় উত্তর করতে হবে। বিভাগভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পঠিত বিষয় প্রাধান্য থাকবে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পদার্থ, রসায়ন ও গণিত বিষয়ে প্রশ্ন বেশি থাকবে। এর পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজিও থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ-২০২৩’এর খসড়া চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি। তবে সেটি সে সময় চূড়ান্ত করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমনকি পাঠানো হয়নি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েও। পরবর্তীতে গত বছরের ২৯ নভেম্বর একক ভর্তি পরীক্ষা সম্ভব নয় জানিয়ে ইউজিসিতে চিঠি পাঠানো হয়। 


সর্বশেষ সংবাদ