ভর্তিচ্ছুর সেবায় থাকছে রাবির তিন মেডিকেল টিম, ৬টি অ্যাম্বুলেন্স
ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৩টি মেডিকেল টিম, ৬টি অ্যাম্বুলেন্স, ১১ স্থানে ওয়াশরুম, অভিভাবকদের জন্য ২০০ আসনবিশিষ্ট ১১টি টেন্ট, ১২টি হেল্পডেস্ক, খাবারের মান বজায় রাখার স্বার্থে ভোক্তা অধিদপ্তরের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিমসহ ২৫টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভর্তি-পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করে আহ্বানপত্র প্রচার করা হয়েছে;
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনসহ প্রক্টরিয়াল বডি/বিভিন্ন সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়সহ তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে; প্রক্টর অফিস মেস মালিক সংগঠনের সাথে আলোচনা করেছে। সংগঠন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে;
প্রক্টর কর্তৃক ক্যাম্পাসে ও সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু থাকবে; ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর তাদের করণীয় নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে; জনসংযোগ দপ্তর আপনাদের মাধ্যমে ভর্তি-পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছে;
৫-৭ মার্চ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ তাদের ব্যক্তিগত গাড়িসমূহ পার্কিংয়ের জন্য সাবাস বাংলাদেশ-এর মাঠ ব্যবহার করবেন। তবে তাদেরকে অবশ্যই সাড়ে ৭টার মধ্যে গাড়িসমূহ পার্কিং করতে হবে; অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে সভার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে পরীক্ষা পূর্ববর্তী সময় থেকে পরীক্ষা চলাকালীন নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সভা সম্পন্ন করেছে।
রাজশাহী সিটি মেয়রের নেতৃত্বে নগরীর সুধীজন, সাংস্কৃতিক কর্মী, শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, মেস মালিক, পরিবহণ মালিক সমিতি এবং অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক সমিতির সাথেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মতবিনিময় করেছে;
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি-পরীক্ষা গ্রহণে অভিজ্ঞ শিক্ষক/কর্মকর্তাদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অধিকতর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সভা সম্পন্ন করেছে; অসাধুচক্রের সদস্যদের তাৎক্ষণিক শাস্তি বিধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে;
ভর্তি-পরীক্ষা চলাকালে রাবি চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালিত একটি মেডিকেল টিম কাজ করবে। সার্বক্ষণিকভাবে ৪টি অ্যাম্বুলেন্সও থাকবে। এছাড়াও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত ২ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম এবং ১টি অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়াও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১টি অ্যাম্বুলেন্স ও ২ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম কাজ করবে;
পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ১১টি অভিভাবকদের বসার জন্য টেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি টেন্টে অভিভাবকদের বসার জন্য ২০০টি করে চেয়ার থাকবে; বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য ১১টি স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকছে। বিষয়টি প্রচারের জন্য ক্যাম্পাসের ১০টি স্থানে সহজে দৃশ্যমান ব্যানার ও নির্দেশিকা থাকবে।
এছাড়াও বিএনসিসি/রোভার স্কাউট/রেস্তারগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ১২টি হেল্পডেস্কের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রদান করবে। এসব হেল্পডেস্কে পানির ব্যবস্থাও থাকবে; ভর্তি-পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সকল ধরনের প্রচারণামূলক লিফলেট বিতরণ নিষিদ্ধ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ডাস্টবিনে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে; প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্রের কয়েকটি করে কপি সঙ্গে আনতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্লাব, সমিতি ও সংগঠনগুলো পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। তবে তারা কোনো প্রকার হেল্প ডেস্ক বা বুথ স্থাপন করতে পারবে না।
ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে;
পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়ামে সীমিত আকারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও নারী অভিভাবকদের অবস্থানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম ৯০ নম্বর বাসায় সীমিত ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমাদান সাপেক্ষে পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সীমিত আকারে ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে;
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনোরূপ হয়রানি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড এবং দোকানগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া খাবারের মান বজায় রাখার স্বার্থে ভোক্তা অধিদপ্তরের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত থাকবে;
পরীক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো রকমের গুজবের (সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হলেও) বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো সহায়তাকারী বলে প্রচারিত ব্যক্তি/সংগঠনের খপ্পর পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে; ক্যাম্পাসে ট্রাফিক ও অন্যান্য নিরাপত্তার বিষয়ে প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাবি প্রশাসন। এসবের মধ্যে আছে সকাল সাড়ে ৭টার পর ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবন, তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা সকল রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে।
এছাড়াও চারুকলা ও কৃষি অনুষদে যাবার জন্য শহর থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের অক্ট্রয়মোড় থেকে ওভারব্রিজ সংলগ্ন রাস্তা ও ভদ্রা গেট এবং কাটাখালীর দিক থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের ফল গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিসের পাশের রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনমুখী সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং অটোরিকশাসহ কোনো প্রকার যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষা-সংক্রান্ত ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত গাড়িসমূহ এই নির্দেশের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়াও বাইরের বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন রাখার জন্য বিহাস থেকে আমচত্বরগামী লিংকরোড ব্যবহার করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজলা গেট ব্যবহার করবেন এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারিস রোড হয়ে মেইন গেট এবং রোকেয়া হলের পেছনের রাস্তা (ফ্লাই ওভার সংলগ্ন) ব্যবহার করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং অসদুপায় অবলম্বন একটি আলোচিত বিষয়। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে, কখনও কখনও অসাধুচক্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকের নিকট থেকে ভর্তির সুযোগ করে দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এজন্য তারা কখনও কখনও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কাগজপত্র জমাও রাখে এবং রেজাল্ট শিটে নাম দেখেই অর্থ দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে ঐ সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিজ যোগ্যতায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও প্রতারণার শিকার হয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে এমন প্রতারণার খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার তিন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৫ মার্চ ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এবারের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এরপর ৬ মার্চ ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) ও ৭ মার্চ ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার ৩টি ইউনিটে কোটা বাদে ৩ হাজার ৯০৪টি আসনের বিপরীতে মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ১১৭টি আবেদন জমা পড়েছে। এ হিসেবে প্রতিটি আসনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪৪ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষা সকাল ৯টা থেকে ১০টা, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা, বেলা ১টা থেকে ২টা এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মোট চার পালায় অনুষ্ঠিত হবে।