ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা: প্রশ্নপত্র নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ভর্তিচ্ছুদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টার এ পরীক্ষা চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দের ভোগান্তি লাঘবে এবছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের অন্য ৭টি বিভাগীয় শহরে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ইউনিটের প্রশ্নপত্র নিয়ে ভর্তিচ্ছুদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তারা যতটা কঠিন ভাবতো সেটি আসলে ততটাও কঠিন নয়। প্রশ্ন তুলনামূলকভাবে সহজ হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে। প্রশ্ন বুঝতেও সমস্যা হয়েছে তাদের।
কুড়িগ্রাম থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, পরীক্ষা খুব একটা কঠিন হয়নি তবে ইংরেজিতে আমার সমস্যা আছে। আশা করি সব কিছু ঠিক থাকলে পড়ার সুযোগ পাবো। আল্লাহর উপর আস্থা রাখছি।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তৌফিক হাসান জানান, আমি খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। সাধারণ জ্ঞান এবং বাংলা খুব সহজ হয়েছে। ইংরেজি এবং লিখিত একটু খারাপ হলেও ভালো কিছুই আশা করছি।
আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, রিটেন পুরাটা শেষ করতে পারিনি। বাকি সব কিছু সহজই হয়েছে। কেন্দ্রে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি, সময়মতো সব কিছু হয়েছে। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখছি ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।
সার্বিক বিষয়ে ঢাবি ভর্তি কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিটি কেন্দ্র থেকে সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আমরা কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। খুব সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এবার আনুমানিক ৫০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে শিক্ষার্থীরা অন্ধ বা লিখতে পারে তাদের জন্য আলাদা একজনকে লিখে দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি এবং তাদের জন্য ১৫ মিনিট সময় অতিরিক্ত দিয়েছি। কিন্তু যারা লিখতে সক্ষম তাদের জন্য আলাদা কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে হুইল চেয়ারে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিবারের থেকে এবার ভর্তি পরীক্ষা একটু ভিন্ন হয়েছে। প্রতিবছর যেমন জেল বা মেডিকেলে থেকে অনেকে পরীক্ষা দেয় ফলে আমাদের একটা বাড়তি ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এবার সেরকমটা ঘটেনি। সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই সবাই পরীক্ষা দিয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম বিষয়ক একটা জটিলতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল। একই ভবনের নাম ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার্থীদের কাছে ভিন্ন এসেছিল এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না তবে পরবর্তী পরীক্ষা আসার আগেই এই বিষয়গুলো সমাধান করতে বলবো। আমি আজই কমিটির সাথে কথা বলবো।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ‘কলা, আইন, ও সামাজিক বিজ্ঞান’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়াসহ সংশ্লিষ্টরা সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র্র পরিদর্শন করেন।
ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন ও অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকাসহ দেশের অন্য ৭টি বিভাগীয় শহরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৯৩৪টি আসনের বিপরীতে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। যথাযথভাবে নিয়মনীতি অনুসরণ করে স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খলভাবে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে কোনো প্রতারক চক্রের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করার জন্য অভিভাবক, পরীক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি উপাচার্য আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কর্তৃপক্ষ, গণমাধ্যম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।