৫ বছরে তিনগুণ বেড়েছে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবেদন ফি গত বছরের চেয়ে ৫০ টাকা বাড়িয়ে এবার এক হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ছিল এক হাজার টাকা।
দেখা গেছে, গত ৫ বছরের ব্যবধানে ভর্তি পরীক্ষায় এই আবেদন ফি বেড়েছে তিনগুণ। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। এরপর ধাপে ধাপে বেড়েছে এই আবেদন ফি। গত পাঁচ বছরে আবেদন ফি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরীক্ষা সংক্রান্ত জিনিসপত্রের দাম বেশি, আটটি বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা হওয়া, টেলিটক কোম্পানির ভ্যাট এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) দায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৩ ফেব্রুয়ারি
জানা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫০ টাকা। এরপর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬৫০ টাকা। পরে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ফি আরও ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়। পরের বার ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষেও আবেদন ফি ছিল ১ হাজার টাকা। এরপর এবার ফি আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০ টাকা করা হয়েছে। ৫ বছরের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন ফি বাড়ছে তিনগুণ। অর্থাৎ, ৭০০ টাকা বেড়েছে।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, সেবার প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ থাকায় ফি ‘সামান্য’ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ায় অতিরিক্ত খরচের কথা বলা হয়। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৩৫০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলেছিল, আগের বছরের ফিতে খরচ সংকুলান হয়নি, তাই বাড়ানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে এবারও সেকেন্ড টাইম থাকছে না
এবার আরও ৫০ টাকা বাড়ানো ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১০ সাল থেকেই আমাদের অনলাইন ফি ছিল ৩০ টাকা যেটা এখন বেড়েছে। সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে যেখানে বলা হয়েছে আবেদন ফির ১০ শতাংশ অনলাইন ফি দিতে হবে। সে অনুযায়ী ১০০ টাকা হলেও আমরা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আগের জিনিসগুলো ব্যবহার করছি এবং ৫০ টাকা কমিয়ে সর্বমোট ১ হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছি।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ছিল ৪৫০ টাকা, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ছিল ৬৫০ টাকা, ২০২১-২০২২ ছিল ১০০০ টাকা, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ছিল ১০০০ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে করা হয়েছে ১০৫০ টাকা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিসের প্রধান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০১৮-১৯ সালে যখন আমাদের আবেদন ফি ৩৫০ টাকা ছিল তখনো ১০ শতাংশ টেলিটককে দিতে হতো। পরবর্তীতে ওই টাকা দিয়ে পরীক্ষার সবকিছুর যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরবর্তীতে সেখানে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়। তখন হয় ৪৫০ টাকা। এটা বাড়ানো হয়েছিলো মূলত পরীক্ষার আইটেমগুলোর জন্য। কারণ ওই টাকায় সব কিছু কেনা সম্ভব হচ্ছিলো না। এর পরে আমরা আবার বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ার কারণে খরচ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ফি বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করি। এই ৬৫০ টাকা দিয়ে আমরা আটটি বিভাগেই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারতাম।
আরও পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ১৮ ডিসেম্বর থেকে
তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে ইউজিসি আমাদেরকে বললো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যে আবেদন ফি সেখান থেকে ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় দেখাতে হবে। এটা নিয়ে তখন আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি কিন্তু তারা মানেনি। পরবর্তীতে তাদের চাপেই আবেদন ফি মূলত ৬৫০ টাকা থেকে একবারে ১ হাজার টাকা করা হয়। আমরা প্রথমে ততটুকুই নিতাম যতটুকু পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল। ইউজিসি এখনো যদি বলে যে কোনো আয় দেখাতে হবে না আমরা আবার ওই ৬০০ কিংবা ৬৫০ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবো।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা-আবেদন-তারিখ জানাল ঢাবি
আরও ৫০ টাকা বাড়ানো ব্যাপারে তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকেই আমাদের অনলাইন ফি ছিল ৩০ টাকা যেটা এখন বেড়েছে। সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে যেখানে বলা হয়েছে আবেদন ফির দশ শতাংশ অনলাইন ফি দিতে হবে। সে অনুযায়ী ১০০ টাকা হলেও আমরা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আগের জিনিসগুলো ব্যবহার করছি এবং ৫০ টাকা কমিয়ে সর্বমোট ১ হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছি। এছাড়া সব কিছুরই দাম বেড়েছে। আগে যেখানে ৫ লাখ টাকা দিতে একটা সার্ভার কিনতাম এখন সেখানে লাগে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। এসব কিছুর বিবেচনায় এবং ইউজিসির ৪০ শতাংশ আয় দেখানোর চাপে আসলে আবেদন ফি বাড়ানো হয়েছে।