একক ভর্তি পরীক্ষার পদক্ষেপ ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত
আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে চায় সরকার। তবে এর আগে বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতির একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে একটি অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। পরে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে অধ্যাদেশের খসড়াটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। সেখানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা এবং একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
সাক্ষাৎকারে উপাচার্য জানিয়েছেন, একক ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি যথাসময়ে ক্লাস শুরু ও পরীক্ষা নেওয়া এবং সেশনজট মুক্ত রাখা— এসব যদি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়; অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেটিকে সমর্থন করবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে ভেবেচিন্তে এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মত অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের।
একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি কোনো ধরনের পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একক ভর্তি পরীক্ষাকে সমর্থন দেবে। তবে সে পরিকল্পনা শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে; পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, তারপর একই সময় ক্লাস শুরু করা এবং সেশনজটের কবলে না পড়লে তাহলেই আমরা একক ভর্তি পরীক্ষায় সমর্থন দেব।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারপর শিক্ষক আর এখন উপাচার্য। এর অর্থ এই নয় আমি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ভাববো। আমাদের দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আমরা চাইবো সমান্তরালে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন এগিয়ে যায়।
“উচ্চশিক্ষা যারাই গ্রহণ করে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোক বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হোক প্রত্যেকেই যেন মানসম্মত শিক্ষা পায়। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেন যথাসময়ে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে।”
একক ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতিতে দুর্বলতা থাকলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছি এটা আমাদের পরীক্ষিত পদ্ধতি। এই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের অসুবিধা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি একটি মর্যাদার জায়গাও।
“আমরা এখন যে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম চালু রেখেছি, সেটি যদি একক ভর্তি পরীক্ষার কারণে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়; তাহলে তো এ দেশের প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সঙ্গে সঙ্গে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে জন্য আমি অনুরোধ করবো শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একক পরীক্ষা পদ্ধতি আছে, জাপানেও একক পরীক্ষা পদ্ধতি আছে। এছাড়াও বেশ কিছু দেশে একক ভর্তি পদ্ধতি চালু আছে। তাই সে ধরনের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে আসার ক্ষেত্রে আমাদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সে পদ্ধতি হতে হবে ত্রুটিমুক্ত। যাতে করে সেখানে এমন কোনো দুর্বলতা না থাকে যে দুর্বলতার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
একক ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টনের বিষয়ে বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন নিয়ে আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। একক ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার বিষয়টা হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে ভর্তি হয় তারা জিআরই ও জিম্যাট দিয়ে তাদের সেখানে ভর্তি করায়। পৃথিবীর অন্য দেশেও এই ধরনের প্রক্রিয়া রয়েছে।
“আমি একক ভর্তি পরীক্ষা বলতে যেটা বুঝি সে ধরনের কোনো একটা পদ্ধতি আমাদের এখানে সূচনা হবে এবং সেখান থেকে যারা ভালো করবে তারা তখন তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে যাবে। পাশাপাশি জিআরই ও জিম্যাট এর ন্যায় যেমন থাকবে; এছাড়াও মেডিসিন যে পড়তে যাবে অথবা যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাবে, যারা ডাক্তার হতে চায়, যারা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় তাদের জন্য কিছু প্রভিশন প্রশ্নের মধ্যে আলাদা থাকবে। যারা অন্য ডিসিপ্লিনগুলোতে যেতে চায় তাদের প্রশ্নে হয়তো বা ওরকম কিছু থাকবে। এর মধ্য দিয়ে একটা পদ্ধতি হয়তো বা সূচনা হবে ভবিষ্যতে। একটা পদ্ধতি হয়তো নির্ধারণ করা হবে। সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত আমরা আলোচনা করিনি।”
মেধা যাচাইয়ে নতুনত্ব আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীও ছিলেন। আমাদের সেখানে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা থেকে যেটি আমরা বুঝতে পেরেছি যে, একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে জাপান যে এক্সারসাইজ করে আমরা সে ধরনের একটি বডি করে একক ভর্তি পরীক্ষার দিকে যাবো।
“জাতি অগ্রসর হোক। আমাদের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসন হবে আর পাশাপাশি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি পরীক্ষা হয় তাহলে সেখানে মেধা যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে আরও কিছু নতুনত্ব আসবে। আমরাতো সব সময় চাই ইনোভেশনের বিষয়টি। এটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের ‘এট প্রেজেন্ট অবস্থা’।”