০৩ মে ২০২৩, ১৭:১৬

মেডিকেলের পর ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ফেসবুকে

মেডিকেল ও ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা  © টিডিসি ফটো

চলতি বছরের মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ বিষয়টি নিয়ে তারা অবগত রয়েছে। সামনের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে এমন গুজব চালানো হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তথ্যমতে, গত ২৯ এপ্রিল চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এবারের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওইদিন বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব

এর আগে, ভর্তি পরীক্ষার দিন সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে ফেসবুকে ‘Mehedi Hasan Shuvo’ নামক একটি আইডি থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা 2023 চারুকলা ইউনিট এর প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই দিয়ে দিলাম সময় সকাল ৮টা ৩৫ মিনিট। যারা ইনবক্সে গিয়ে প্রুভ চাও তাদের জন্য শেষবারের মতো প্রশ্নের কিছু অংশ ফ্রি তে দিলাম। এইটুকু ই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যাদের ডেন্টাল, ঢাকা, গুচ্ছ, রাজশাহী, নার্সিং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১০০% কমন প্রশ্ন লাগবে তারা ইনবক্সে  যোগাযোগ করো। আমি এডভান্স টাকা ছাড়া প্রশ্ন সেল করিনা। যাদের এডভান্স করতে সমস্যা আছে তারা আমার থেকে দূরে থাকো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্স। যারা বাংলা কম বুঝো দয়া করে তারা অযথা মেসেজ দিয়ে বিরক্ত কইরোনা। বিঃদ্রঃ এটাই আমার প্রমাণ দেওয়ার জন্য শেষ পোস্ট আমার আইডি থেকে আর কখনো এইভাবে পোস্ট হবে না। প্রমাণ অনেক দিছি আর কতো।”

এই পোস্টটি থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দাবি করা হয় 

তবে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। বরং ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধা ঘন্টা পর ওই পোস্ট সম্পাদনা (এডিট) করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে পোস্টাদাতার (Mehedi Hasan Shuvo) আইডির সেই পোস্টের ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে দুপুর ১টা ৮ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৩৮ মিনিট পর ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।

এডিট করা সেই পোস্টটি

ফেসবুকে একই ধরনের পোস্ট গত ১০ মার্চ দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময়ও দেওয়া হয়েছিল। এই পোস্টটি ছিল ‘Shahidul Hasan Tamim’ নামে আরেক আইডিতে। তবে পোস্টটির ধরন ছিল একই।

১০ মার্চ সকাল ৭টা ১১ মিনিটে দেয়া পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘‘Medical Admission Question 2023 সময় সকাল ৭টা ৯ মিনিট। কিছু ফ্রিতে দিলাম পরীক্ষার পর এসে মিলিয়ে নিয়ো। আমি এডভান্স টাকা ছাড়া কাউকে কোন প্রশ্ন দেই নি আর কোনদিন দিবোও না। বলছিলাম পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে ফ্রি দিবো কিছু দিলাম এইটুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যাদের ডেন্টাল এডমিশন টেষ্ট ও প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার যে কোনো ভর্তি পরীক্ষার ১০০% কমন প্রশ্ন লাগবে তারা দ্রুত যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্স যারা বাংলা কম বুঝো দয়া তারা অযথা কোন মেসেজ দিয়ে ব্লক খাবে না।’’

জানা যায়, ১০ মার্চ সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী সারা দেশের ১৯টি কেন্দ্রের ৫৭টি ভেন্যুতে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটিও সঠিক ছিলনা। বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১ ঘন্টা পর ওই পোস্ট এডিট করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়েছিল।

অর্থাৎ, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ছবিটি ঐ পোস্টে সংযুক্ত করা হয়েছে দুপুর ১২টা ৪ মিনিটে; অথচ মেডিকেলের পরীক্ষাটি সংযুক্ত প্রশ্নে সম্পন্ন হয়েছে তার এক ঘণ্টা আগে সকাল ১১টায়।

এ বিষয়ে পোস্টটির (Shahidul Hasan Tamim- নামক একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট) ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছিল, সকাল ৭টা ১১ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে দুপুর ১টা ৮ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।  পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১ ঘন্টা ৮ মিনিট পর ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।

অর্থাৎ, মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁসের পোস্ট দুটি লেখা হয়েছে সকালে এবং পরীক্ষার পর প্রশ্ন সংযুক্ত করে বিশ্বস্ততা অর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে— যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতারণার জন্য করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

এ ধরনের গুজবের বিষয়ে প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান ইনফো স্টেশনের প্রকৌশল প্রধান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ লিংকন মাহমুদ বলেন, এটি চাইলেই এডিট করে পরে যুক্ত করা সম্ভব; এর আগেও এরকম হয়েছে। আপনি চাইলেই কয়েক বছর বা অনেক সময় আগে গিয়ে পোস্ট দিতে পারবেন। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত ফিচার রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, সেজন্য ফ্যাক্টচেকিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সঠিক তথ্য উদঘাটনে। ফেসবুকের এ সংক্রান্ত ফিচার আছে, পাশাপাশি আমাদের গণমাধ্যমগুলোও এ সংক্রান্ত কাজ আরও বাড়ালে এ ধরনের গুজব বা মিথ্যা প্রচারণা রোধ করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, চারুকলার ভর্তি পরীক্ষার গুজবের বিষয়টি শুনেছি। সামনের পরীক্ষাগুলো এমন গুজব চালালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাছাড়া আমরা গণমাধ্যমের বন্ধুদের সহযোগিতা চাই। যাতে আগে থেকেই এবিষয়ে অবগত হতে পারি এবং প্রতিরোধ করতে পারি।