একক ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়া অনিশ্চিত বড় ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে মরিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এই পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়। একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বক্তব্য ‘ভেবে দেখা হবে’।
জানা গেছে, উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কেবল একটি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে গত সোমবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সভাকক্ষে আয়োজিত ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত থাকলেও সভায় আমন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা উপস্থিত ছিলেন না। এতে করে সভার সফলতা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
ইউজিসির ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও বুয়েটের উপাচার্য ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ঢাবির পক্ষে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল উপস্থিত ছিলেন। ফলে এই সভার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সভায় কারা উপস্থিত ছিল আর কারা ছিল না সেটি মূল বিষয় না। আমাদের সভা ফলপ্রসূ হয়েছে। এখন আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করবো। এটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়েই করা হবে। নীতিমালা করার পর কারো আপত্তি রয়েছে কি না তখন সেটি দেখা হবে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাশ্রয় এবং ভোগান্তি কমাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এই ভর্তি পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করেনি ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বুয়েটও নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। ফলে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এই অবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা সফলতার মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বড় বিশ্ববিদ্যালয়গেুলো বলছে, উন্নত বিশ্বে একটি ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে বাংলাদেশে এটি একেবারেই নতুন। কাজেই এই পদ্ধতির পরীক্ষা কীভাবে হবে, কারা এর নেতৃত্বে থাকবে সবকিছুই স্পষ্ট করতে হবে। এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না সেটিও দেখতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একক পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমাদের নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র ভর্তি পদ্ধতি রয়েছে। তবে জাতীয় স্বার্থে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই সেটি ভেবে দেখব। তবে অবশ্যেই সেটি শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে করতে হবে।
একক পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে চাইলে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, অনেক সময় জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করব। এরপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে এই পদ্ধতির পরীক্ষার ফ্রেম ওয়ার্কটি জাতির সামনে তুলে ধরা উচিত।
জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি কেবল প্রাথমিক আলোচনা। কাজেই এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করার সময় হয়নি।
তবে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার এবং রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির।