যেভাবে হতে পারে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভর্তি পরীক্ষা
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করবেন।
সোমবার (০৩ এপ্রিল) ইউজিসির সভাকক্ষে আয়োজিত এক রুদ্ধদার বৈঠকে প্রাথমিকভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
তিনি বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করার জন্য একটি ভর্তি পরীক্ষা হবে। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় কোনো ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে না। এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় যেন ক্লাস শুরু করতে পারেন সভায় সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ইউজিসির এই সদস্য জানান, আমরা একটি কমিটি গঠন করবো। এই কমিটির আহবায়ক হবেন ইউজিসির চেয়ারম্যান। কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, শিক্ষকরা থাকবেন। তারা তাদের মতামত দেবেন। সেই মতামতের ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা তিনটি বিভাগে পড়ালেখা করেন। এগুলো হলো- বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখা। এর ওপর ভিত্তি করেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হবে। যে কমিটি গঠন করা হবে, তারা পুরো বিষয়টি এনালাইসিস করবেন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি বিভাগের জন্য কমন সাবজেক্ট থেকে প্রশ্ন থাকবে। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিষয়বস্তু থেকেও আলাদা প্রশ্ন থাকবে।
উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরুন বাংলা-ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রতিটি বিভাগের জন্য প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে মানবিকের বিষয়বস্তু থেকেও প্রশ্ন থাকবে। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা শাখার বিষয় থেকেও আলাদা প্রশ্ন থাকবে। একইভাবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের বিষয়বস্তু থেকে পৃথক প্রশ্ন থাকবে।
অধ্যাপক আলমগীর আরও জানান, পরীক্ষা শেষে কোনো শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করবেন, তখন সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তির যোগ্যতা দেখা হবে। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে পড়তে গণিতে নম্বর প্রয়োজন হবে কি না, ফার্মেসি বিভাগে পড়তে জীববিজ্ঞানে নম্বর লাগবে কি না সে বিষয়টি দেখা হবে। একই ভাবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতাও দেখা হবে। এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে কোনো শিক্ষার্থীর ফাইন আর্টস কিংবা স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হতে কোন বিষয়ে কত নম্বর প্রয়োজন হবে সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করতে পারে। অথবা যে কমিটি থাকবে, সেই কমিটিও এই বিষয়টি নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভায় কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ ও প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু ইউসুফ মিয়া এবং ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববদ্যিালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান সভায় অংশগ্রহণ করেন।