এক পরীক্ষায় ২২ বিশ্ববিদ্যালয়, সংকট কাটিয়ে আশা জাগাচ্ছে গুচ্ছ ভর্তি
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয়েছে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম। ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। গত দু বছরের ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয়বারের মতো গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৫-৬ জন পরীক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তিনি একটি পরীক্ষা দিয়ে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত হওয়ায় চাইলেও সময়, অর্থ এবং বিভিন্ন কারণে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতেন না পরীক্ষার্থীরা। ফলে গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে তার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
আরও পড়ুন: চার মাস এগিয়ে আসছে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা
এছাড়াও এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন করার সুযোগ থাকায় পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। যারা পছন্দের বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেন তাদের জন্য গুচ্ছ পদ্ধতি একটি ভাল সুযোগ তৈরি করেছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হতো। যাতায়াতের ভোগান্তিতে পড়তে হতো শিক্ষার্থীদের। যাতায়াতের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অনেক শিক্ষার্থী দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যেতেন না। গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ভোগান্তি অনেকটাই লাঘব হয়েছে।
২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেওয়া সাদিয়া তানজিল পাপিয়া বলেন, পারিবারিক কারণে আমি চাইলেও বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে পারতাম না। একটি পরীক্ষা দিয়েই আমি আমার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পারলেও আমার হাতে আরও ২১ টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল যা আমার জন্য বড় একটি সুযোগ ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গুচ্ছ পদ্ধতির আরেকটি ভালো দিক পরীক্ষার্থীদের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। অতীতে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কিংবা তারও বেশি টাকা আবেদন ফি নিতো। ফলে আবেদন ফি বাবদ অনেক টাকা খরচ করতে হতো শিক্ষার্থীদের। অনেকেই অর্থ সংকটে ৪-৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশি আবেদন করতেন না। গুচ্ছ পদ্ধতি এই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্র থেকে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সাদেকুর রহমান। তিনি জানান, আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে আমি হয়তো শুধু রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতাম। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে আমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি এবং বর্তমানে এখানেই পড়াশোনা করছি। তাই আমি বলবো গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি আমার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বার বার পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেকেই পরীক্ষার পূর্বে মানসিক চাপে ভোগেন। গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের এই মানসিক চাপ থেকেও মুক্তি দিয়েছে।
গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের অনেক ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ভাবে মেধা তালিকা তৈরি হওয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তবে ভর্তি এবং মাইগ্রেশনের লম্বা সময় নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্যার সমাধান করতে পারলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শত ভাগ কার্যকর একটি পদ্ধতি হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ইউজিসি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ২০০৯ সালে গুচ্ছ নিয়ে ফিল্ড রিসার্চ হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই চায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হোক। এর প্রেক্ষিতেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়।
তিনি বলেন, যেকোনো কিছুরই শুরুর দিকে কিছু সমস্যা দেখা যায়, পরবর্তীতে সেগুলো ওভারকাম করতে হয়। গুচ্ছের ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমনই। বিগত বছরে যে সমস্যাগুলো ছিলো সেগুলো এবার ওভারকাম করা হবে।