২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২১

থাকছে গুচ্ছ, বেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা  © সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শুরু হয় গুচ্ছ পদ্ধতির (সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-জিএসটি গুচ্ছ) ভর্তি পরীক্ষা। তবে আগামী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আওয়ামী লীগের আমলে শুরু হওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিতে এই গুচ্ছ পদ্ধতি থাকা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে একক ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে প্রথম গুচ্ছের নেতৃত্ব দেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে বিষয়টি নিয়ে কোনো তথ্য নেই।

‘গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা অবশ্যই হবে। আমার জানামতে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেবে। যারা গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, তাদের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। আমি মনে করি, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিসিদের ডেকে একটা কমন আলোচনার প্লাটফর্ম তৈরি করবে। উপর মহলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করা যাবে না। এই মুহূর্তে আগের গুচ্ছের কার্যক্রম শেষ করতে আমরা কাজ করছি— অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম আখন্দ, আহ্বায়ক, জিএসটির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটি

এদিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও গুচ্ছতে না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জোরালো বক্তব্য হলো এ পদ্ধতিতে মানসম্মত শিক্ষার্থী বাছাই করা যায় না। এছাড়াও অতিরিক্ত সময় নষ্ট এবং পরীক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরাও গুচ্ছ পদ্ধতির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একাধিকবার। জানা গেছে, অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা এই পদ্ধতিতে সর্বশেষ গুচ্ছের কর্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। বাকি রয়েছে লাস্ট মাইগ্রেশনের কাজ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পোহাতে হচ্ছে শিক্ষা জটের ধকল।

গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। তবে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি হলো গুচ্ছ থেকে বের হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আগের পদ্ধতি অনুযায়ী স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করুক। বিষয়টি আমরা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আলোচনা করে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাব।’

গুচ্ছে থাকা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বেশিরভাগ বড় বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি থাকলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এরমধ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রস্ততি বিবেচনায় তারা এবারের গুচ্ছে অংশ নেয়া বা না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে আসতে চান বাকৃবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন জানান, এই মুহূর্তে ইউজিসি বিষয়টি নিয়ে কোনো কাজ করছে না। গুচ্ছ থাকবে কিনা, থাকলে কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থাকবে কোনগুলো থাকবে না এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ থেকেও এটার বিষয়ে পরামর্শ বা মতামত আসতে পারে। কিন্তু ইউজিসির এখানে কোনো ভূমিকা নেই। 

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা সভা করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে। পরবর্তীতে নিয়ম মেনে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সর্বশেষ সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাজীপুর) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান। তবে সম্প্রতি প্রফেসর হাবিবুর রহমান ডুয়েটের‌ উপাচার্য পদ থেকে সরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ নতুন করে কোনো সভাপতি মনোনয়ন করেনি। ফলে উপাচার্যদের এ সংগঠন থেকেও আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা নেই।

‘গুচ্ছে থাকা এবং না থাকার বিষয়টি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক প্রস্তুতির উপর নির্ভর করছে। প্রস্ততি ভালো না থাকলে হয়ত আমরা গুচ্ছে থেকে যাব। তবে ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো নিয়ে আমরা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাই। সিদ্ধান্ত নিতে যাতে বেশি সময় ব্যয় না হয় সেটিও আমরা মাথায় রাখব— অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

গুচ্ছে না থাকার কথা জানিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রবিবার (২৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. এফ এম সালাউদ্দিন জানান, আমরা এখন পর্যন্ত গুচ্ছতে না থাকার পক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কমিটির  মিটিংয়ে গুচ্ছতে না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা গুচ্ছতে না থাকার পক্ষে মত দিয়েছে। গুচ্ছে থাকার কারণে শাবিপ্রবি মানসম্মত শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। উপাচার্য বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

গুচ্ছে থাকছে কিনা বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য  অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে অ্যাকাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমি ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাতে চাই না। 

উপাচার্য জানান, গুচ্ছে থাকা এবং না থাকার বিষয়টি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক প্রস্তুতির উপর নির্ভর করছে। প্রস্ততি ভালো না থাকলে হয়ত আমরা গুচ্ছে থেকে যাব। তবে ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো নিয়ে আমরা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাই। সিদ্ধান্ত নিতে যাতে বেশি সময় ব্যয় না হয় সেটিও আমরা মাথায় রাখব।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় ফিরতে চাইলে ইউজিসির কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। ফলে গুচ্ছ পদ্ধতি থাকলেও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত। ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটা তাদের নিজস্ব অধিকার। তবে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বিষয় বিবেচনা করে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব।’

‘এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের দেয়া মতামত এবং বাস্তব চিত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়— খালেদা আক্তার, অতিরিক্ত সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়

জিএসটির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে তারা গুচ্ছে থাকতে চায় না। তবে আমরা এখনও আগের গুচ্ছের কাজগুলো করছি। কাজগুলো শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সামনের গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমরা এখনো কোনো আলোচনা করিনি।’

অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম আরও বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা অবশ্যই হবে। আমার জানামতে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেবে। যারা গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, তাদের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। আমি মনে করি, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিসিদের ডেকে একটা কমন আলোচনার প্লাটফর্ম তৈরি করবে। উপর মহলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করা যাবে না। এই মুহূর্তে আগের গুচ্ছের কার্যক্রম শেষ করতে আমরা কাজ করছি।’

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, দেশের বাইরে থাকায় তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। তবে খালেদা আক্তার জানান, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের দেয়া মতামত এবং বাস্তব চিত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শুরু হওয়া জিএসটি গুচ্ছে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছিল। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (কিশোরগঞ্জ), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর।