একদিকে প্রতিদিন ক্লাস অন্যদিকে অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তায়
অ্যাসাইনমেন্ট করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। করোনার যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় চলছে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম। অন্যদিকে, ৫৪৩ দিন পর রবিবার থেকে সারাদেশে খুলছে স্কুল-কলেজের দ্বার। সপ্তাহে ৬ দিন চলবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস। সেই সাথে এখন ক্লাস করিয়ে শিক্ষার্থীদের নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে সশরীরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার ঘোষণাও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে স্কুল-কলেজে খোলার পরও অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম কেন চলছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছে, একদিকে অ্যাসাইনমেন্টের চাপ অন্যদিকে অতি নিকটেই পরীক্ষার দিনক্ষণ। অল্প সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিব নাকি অ্যাসাইনমেন্ট করবো? তারা আরও বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের আশা দেখিয়ে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট ও হয়রানির করা হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম বন্ধ করে বাকি সময়টুকু ক্লাস করিয়ে দ্রুত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
ঘোষণা অনুযায়ী, করোনার কারণে এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিতে না পারলে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন এবং পরীক্ষা হলে সেক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতির জন্য অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ পড়ুয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী নুসরাত ইয়াসমিন ইমু বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরও অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম চলমান থাকায় একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। একদিকে আ্যসাইনমেন্ট অপরদিকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই এ মুহূর্তে হয় আমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ দিন না হয় অ্যাসাইনমেন্ট ঠিক মতো শেষ করার ব্যবস্থা করুন। অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষার প্রস্তুতি দুটো একসাথে গ্রহণ প্রায় অসম্ভব। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন, হয় আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট করিয়ে দ্রুত মূল্যায়ন করা হোক নাহয় পরীক্ষার রুটিন দিয়ে ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হোক।
সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ পড়ুয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাছলিমা বেগম বলেন, এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের উপর অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে বেঁধে দেয়া হলো এক নানান নিয়ম। যেমন: A-4 পেপারে লিখতে হবে, পেজের অপর পৃষ্ঠায় লেখা যাবে না, মার্জিন দুইদিকে দিতে হবে, কালো কলম ছাড়া অন্য কালারের কলম ব্যবহার করা যাবে না, শিরোনাম নিয়ে তো এক মহাকাব্য। লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের উপর এগুলো একপ্রকার মানসিক অত্যাচার। অ্যাসাইনমেন্ট করানোর প্রধান উদ্দেশ্য যাতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ হয় কিন্তু বাস্তবে তার ছিঁটেফোঁটাও হচ্ছেনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ইউটিউব বা ফেইসবুক দেখে অ্যাসাইনমেন্ট করছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের উচিত অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস করিয়ে দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে মূল্যায়ন করা৷
চট্টগ্রামের গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় পড়ুয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী আব্দুল হাকিম বলেন, একদিকে অ্যাসাইনমেন্ট চলছে অন্যদিকে নভেম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাহলে আমরা এখন কোনদিকে যাব? সারাদিন অ্যাসাইনমেন্ট লিখবো নাকি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিব? অ্যাসাইনমেন্ট যেন এখন রীতিমতো ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট কখনোই এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি হতে পারেনা৷ সরকারের উচিত অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা।
ঢাকা বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাহাদ বলেন, যেহেতু সশরীরে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেহেতু এখনো কেন অ্যাসাইনমেন্টের চাপ? যতক্ষণ ধরে অ্যাসাইনমেন্ট লিখব ততক্ষণ পরীক্ষার টপিকগুলো ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। অ্যাসাইনমেন্ট নামক ভোগান্তি থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচতে দিন।
আরেক এসএসসি পরীক্ষার্থী স্বপ্না বলেন, সরকার যেকোনো একটি সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারেন না। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আছে মাত্র আড়াই মাস। এখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিব আমরা নাকি অ্যাসাইনমেন্ট করবো?যদি পরীক্ষাই হয় তাহলে A4 সাইজের পেপার কিনে এত এত লিখা জমা দিয়ে কি লাভ? অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব ? শিক্ষামন্ত্রীর উচিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।
এদিকে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম চললেও তাতে পরীক্ষার প্রস্তুতির ছিটেফোঁটাও হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের৷ অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ইউটিউব, গুগল, ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে দেখে দেখে তৈরি করছে অ্যাসাইনমেন্ট৷ এছাড়া নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দিলেও এখনো কবে থেকে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম মূলত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে রাখার জন্য দেয়া হলে অনেকটাই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কারণ শিক্ষার্থীরা দেখে দেখে লিখলেও বসে না থেকে এক্ষেত্রে শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকছে। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন কিংবা অ্যাসাইনমেন্টকে পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে দেখা অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য যেকোনো প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং সমন্বয়হীনতার অভাবে যেকোনো সিদ্ধান্তই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতেই অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম দিয়েছি। এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের উপরই এইচএসসি ও এবারের এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা যদি একটু মনোযোগ দিয়ে বুঝে বুঝে এসব অ্যাসাইনমেন্ট করে সেক্ষেত্রে খুব সহজেই ভালো ফলাফল করতে পারবে এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় পরীক্ষার আগ পর্যন্ত সশরীরে ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব। এছাড়া যথারীতি অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরো বাড়িয়ে তুলবে৷