অটোপাসে না গেলেও বিকল্প পদ্ধতিতে এসএসসি-এইচএসসি
করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৩০ জুন খোলার ঘোষণা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধই থাকছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। এভাবে টানা বন্ধে বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহসা খোলার সম্ভাবনা নেই। এ পরিস্থিতিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভবনাও কমে আসছে। বাতিল হতে পারে বাকি পাবলিক পরীক্ষাগুলোও।
এর পরিবর্তে এসএসসি-এইচএসসি শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের আলোকে ফলাফল দেওয়া হতে পারে। একইভাবে বাতিল হয়ে যেতে পারে জেএসসি-জেডিসি ও পিইসি-ইইসি পরীক্ষাও। সবমিলিয়ে করোনার কারণে এবার চারটি পাবলিক পরীক্ষাই বাতিল হওয়ার ঘোষণা আসতে যাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত এসএসসি ও এইচসি পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখতে চাই। এর মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে বিকল্প ভাবতে হবে আমাদের।’ এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিই রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের মধ্যে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া না গেলে বিকল্প পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে দু’টি বিকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪৪ লাখ পরীক্ষার্থীর ফলাফল দেওয়া হবে। এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ আগে ঘোষণা দেয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে এসএসসির জন্য ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসির ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা হবে। ক্লাস শেষে অন্তত ১৫ দিন সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। ঈদুল আজহার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ফলে এ দুই পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হচ্ছে।
এদিকে ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা নাও হতে পারে। একই সিদ্ধান্ত আসবে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ক্ষেত্রে। সবমিলিয়ে করোনার কারণে এবার চারটি পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আগস্টে। এবার এর আগেই সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য আরও অপেক্ষা করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে গুরুত্বপূর্ণ চার-পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের ভাবনা আছে। তবে কোনোভাবেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হতে পারে। এর সঙ্গে সাথে আগের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার নম্বরও যোগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে এসএসসিতে জেএসসি এবং এইচএসসিতে জেএসসি ও এসএসসির নম্বর মূল্যায়নে থাকতে পারে।
অপরদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষাও হচ্ছে না। এর পরিবর্তে ‘বাড়ির কাজ’ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে নতুন শ্রেণীতে তুলে দেয়া হবে। অটোপাস দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এর সারসংক্ষেপ শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কাজ চলবে বাড়ির কাজের মাধ্যমে। তাদের ক্লাসে আনা না গেলে বার্ষিক পাঠপরিকল্পনার আলোকে পড়ানো হবে। এ প্রক্রিয়ায় তাদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করা হবে।’ কেউ অটোপাস পাবে না বলেও জানান তিনি।
কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষাটি নিয়ে থাকে। তারা এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত দেবে তাতেই সম্মতি দেব। দুটি পরীক্ষার জন্য একই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করে জানানো হবে বলে জানান তিনি।