সুতায় ঝুলছে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ভাগ্য
করোনাভাইরাসের কারণে আরও একমাসের বেশি সময় বাড়ানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ছুটি আরও একদফা বাড়িয়ে করা হয়েছে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে এ সময়ের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাসও হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। এতে আরও অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এখনও ফরম ফিলাপও হয়নি, বাকি রয়েছে টেস্ট পরীক্ষাও। অথচ ফেব্রুয়ারিতেই হওয়ার কথা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার একমাস পর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা।
করোনাভাইরাসের কারণে ইতিমধ্যে চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে সরকার। এছাড়া এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করে জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার আলোকে ফল প্রকাশ করা হবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এ ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে এভাবে ফল ঘোষণা করায় ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে কোন প্রক্রিয়ায়, তাও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে এখন বড় অনিশ্চয়তায় আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের বিশাল অংশই বাকি রয়েছে। ফলে এই ঘাটতি নিয়ে তাদের পরীক্ষা কীভাবে হবে, তা নিয়েই চলছে নানা ধরনের আলোচনা। এ ঘাটতি পূরণ না করে পরীক্ষা নেয়া হলে তা বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত হবে বলে অনেকে মনে করছেন। আবার করোনার কারণে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময়সূচিও প্রকাশসহ কোনো বিষয় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না শিক্ষা বোর্ডগুলোও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেছেন, ‘প্রায় সাত মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমার বোন পড়াশোনার বাইরে। এ অবস্থায় পরীক্ষা কীভাবে হবে বুঝতে পারছি না। ক্লাস শুরু না হলে তারা পড়তেও চায় না। আবার ক্লাস না নিয়ে ভিন্ন কোনো উপায়ে পরীক্ষা নিলে তাতেও বড় গ্যাপ থেকে যাবে। জানি না, সংশ্লিষ্টরা কীভাবে দেখছেন বিষয়টি।’
অবশ্য সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, ১৪ নভেম্বরের পর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে কিছু করার চেষ্টা চলছে। তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস শুরু হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে নতুন করে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করায় সে উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি। এতে আরও অনিশ্চয়তায় পড়েছে আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষাও এখনো অনিশ্চয়তায়। কীভাবে পরীক্ষা হবে সে সিদ্ধান্তও হয়নি। শুরুতে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হলেও পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন উপাচার্যরা। এখন বুয়েট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এককভাবে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে পরীক্ষা হবে তা নিয়ে এখনও বিস্তারিত জানায়নি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া গুচ্ছ পরীক্ষা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাগিদ দিলেও শীর্ষস্থানীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাতে সায় দেয়নি।
অপরদিকে আগামী বছর থেকে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘ঘ’ ইউনিট ও চারুকলা অনুষদের ‘চ’ ইউনিট তুলে দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে ‘চ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি অংশ এর বিরোধীতা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, সম্প্রতি ডিনস কমিটির সভায় ‘চ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা তুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত অথবা প্রস্তাবনা নেয়া হয়নি। বরং সভার রেজুলেশনে ‘চ’ ইউনিট তথা চারুকলা অনুষদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনও করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা স্লোগান দিয়েছেন ‘করোনার মধ্যে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা নয়’। শিক্ষার্থীদের দাবি, করোনা পরিস্থিতির সময়ে সরকার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকার পরও পরীক্ষা বাতিল করে প্রমোশন দিয়েছে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার্থীরা গত দশ মাস ধরে বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। কোনো ধরনের প্রাইভেট-কোচিং করার সুযোগও ছিল না। এ কারণে প্রস্তুতির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।