এইচএসসি’র ফল চূড়ান্ত করতে ৭ চ্যালেঞ্জ বাের্ডগুলাের

এইচএসসি’র ফল চূড়ান্ত করতে ৭ চ্যালেঞ্জ বাের্ডগুলাের
এইচএসসি’র ফল চূড়ান্ত করতে ৭ চ্যালেঞ্জ বাের্ডগুলাের  © টিডিসি ফাইল ফটো

করোনা সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিক সার্টফিকেট পরীক্ষা (এইচএসসি) ও সমমানের ফল মূল্যায়নের কাজ শুরু করতে গিয়ে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে। এ ক্ষেত্রে অন্তত সাত ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাের্ডগুলাে।

মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিভাগ পরিবর্তন, মানােন্নয়ন পরীক্ষার্থী এবং কারিগরি থেকে সাধারণ শিক্ষায় আসা পরীক্ষার্থীসহ সাত ধরনের পরীক্ষার্থীদের নিয়েই মূলত এ জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরাও। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ডের (মাউশি) একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটিই তাদের মূল লক্ষ্য।

৭ অক্টোবর সরকার ঘােষণা দেয়, করোনার কারণে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল ঘােষণা করা হবে।

বিভিন্ন শিক্ষা বাের্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় একটি সমস্যা হলাে যাঁরা এসএসসিতে এক বিভাগে পড়েছিলেন, কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিভাগ পরিবর্তন করেছেন (কেউ হয়তাে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছিলেন, কিন্তু এইচএসসিতে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পড়েছেন। তাঁদের বিষয়ভিত্তিক ফল কীভাবে তৈরি হবে। কারণ, বিভাগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি বাধ্যতামূলক বিষয় ছাড়া বাকি পাঠ্য বিষয়গুলাে পরিবর্তন হয়। বিষয়ভিত্তিক এ জটিলতা নিরসনে এখন জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির বিষয়গুলােকে 'ম্যাপিং করা হচ্ছে। যেসব বিষয়ের মধ্যে মিল আছে, সেগুলাের জন্য একধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যেগুলাের মিল নেই, সেগুলাের জন্য আরেক ব্যবস্থা হবে।

বিভাগ পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যসচিব ও ঢাকা শিক্ষা বাের্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলাে সমাধান করেই ফল মূল্যায়ন করা হবে, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

এবার এইচএসসি ও সমমানের মােট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থী। ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে গতবারের এইচএসসিতে এক বিষয়ে পাস করতে না পারা পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া পরীক্ষার্থী ৫৪ হাজারের বেশি। আর সব বিষয়ে ফেল করা বা গতবার পরীক্ষা দেওয়া পরীক্ষার্থী ৫১ হাজারের বেশি। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে গতবার ফেল করা এসব শিক্ষার্থীই জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে পাস করতে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া ১৬ হাজারের কিছু বেশি মানােন্নয়ন পরীক্ষার্থী ও তিন হাজারের বেশি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী রয়েছেন, যাঁরা গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল করেননি, তাঁরাই বেশি প্রস্তুতি নিয়ে মানােন্নয়ন পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযােগ আর পাচ্ছেন না। ফলে ইতিমধ্যে পাস করা এসব শিক্ষার্থীর ফল কী হবে, সেটিও একটি জটিল প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলাে তাঁদেরও জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যদি তাঁদের জেএসসি ও এসএসসির ফল যদি খারাপ থাকে, তাহলে কী হবে।

কারিগরিতে জেএসসি পরীক্ষা নেই। আবার অনেক শিক্ষার্থী কারিগরির এসএসসি ভােকেশনাল পাস করে এইচএসসিতে সাধারণ শিক্ষায় আসেন। এখন এসব শিক্ষার্থীর ফল মূল্যায়ন কীভাবে হবে, সেটি নিয়েও জটিলতার আশঙ্কা করছেন বাের্ড কর্মকর্তারাই।

এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেও অনেকে সাধারণ ধারার এইচএসসিতে পড়েন, যাঁদের বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আছেন, যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশােনা করে সমতুল্য সনদ নিয়ে এইচএসসিতে পড়েন। এ ছাড়া কয়েক হাজার প্রাইভেট পরীক্ষার্থী আছেন, যাঁদের সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশােনা নেই।

আরেক দল শিক্ষার্থী আছেন, যারা কোনাে কারণে হয়তাে জেএসসি বা এসএসসি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল করতে না পেরে এইচএসসির জন্য প্রায় দুই বছর ভালাে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, কিন্তু তারা পরীক্ষা দিতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ রকম একজন পরীক্ষার্থীর বাবা বলেন, তাঁর সন্তান জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। কিন্তু এসএসসিতে অসুস্থতা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ায় ফল জিপিএ-৪ এর একটু বেশি। এরপর গত দুই বছর এইচএসসির জন্য সে খুব ভালাে প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু জেএসসি ও এসএসসির ভিত্তিতে মূল্যায়ন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ফল প্রত্যাশিত হবে না। এতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাঁদের।

করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়টি ঠিক থাকলেও মূল্যায়ন নিয়ে আরও কিছু করার সুযােগ ছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতে এইচএসসির ফল কতটা গ্রহণযােগ্য হবে, সেটি একটি প্রশ্ন। এখন বিভিন্ন কারণে শুধু এই সাত চ্যালেঞ্জ নয়, যত দিন যাবে, আরও চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ