জিপিএ-৫ বেড়েছে ৫৩ হাজার, নেপথ্যে কী?
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলে বেশিরভাগ বিষয়ের মূল্যায়ন হয়েছে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতির আশীর্বাদে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন। চলতি বছর ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। এবার অর্ধলক্ষাধিক জিপিএ-৫ বেড়েছে, প্রকৃত কারণ কী? এটা কি সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের জন্যই বেড়েছে?
অন্যদিকে, এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের থেকে সামান্য কমেছে। চলতি বছর গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের কিছুটা কমার এবং জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিক বেড়ে যাওয়ার পেছনে কিছু কারণ দেখছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা ও শিক্ষকরা। ইংরেজি পরীক্ষা বাতিল পরীক্ষাগুলোর তালিকায় না থাকায় পাসের হার অনেকটা আগের মতই আছে বলে মনে করছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। আর ২০২২ সালের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানে ২ লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ অর্জন সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে বিপুল প্রভাব বিস্তার করায় এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম।
কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ে পাস করিয়ে দেয়া হয়েছিলো ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ বা ‘অটোপাসে’। তারপর ২০২১ সালে পরীক্ষা নেয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, বাছাই করা বিষয়ে। তাতে স্বভাবতই পাসের হার কমে যায়। সেবার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হন। পরের বছর ২০২২ সালে গড় পাসের হার কমে হয় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সিলেবাস ও পরীক্ষার বিষয় বাড়িয়ে অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষায় ২০২৩ সালেল এইচএসসি ও সমমানে পাসের হার নেমে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২০ সালে জেএসসি ও এসএসসি ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির সব বিষয়ের সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হলেও ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের বাতিল হওয়া বিষয়গুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিং হয় শুধু এসএসসির ফলের ভিত্তিতে।
আরও পড়ুন : এইচএসসির ফল পেয়ে উচ্ছ্বাস, আছে অপ্রাপ্তিও
পাসের হার সামন্য কমার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা প্রচলিতভাবে দেখি ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ফেল করার প্রবণতা বেশি। ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা কিন্তু হয়েছে। খাতায় প্রাপ্ত নম্বরেই শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অপরদিকে অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাসের মত বিষয়গুলোতে কিন্তু ফেল করার প্রবণতা কম। একইভাবে রসায়ন বা গণিতের মত বিষয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ খারাপ করলেও ফেল কম করেন। তাই পাসের হার অনেকটা আগের মতই আছে।’
জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আসলে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগের যে শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের এসেছেন তারা সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের সুফল পেয়েছেন। যেমন পদার্থবিজ্ঞানে জিপিএ-৫ নিয়ে যে শিক্ষার্থী এসএসসি উতরে মানবিকে এসেছেন, পরীক্ষা হলে ইসলামের ইতিহাস বা অর্থনীতিতে তার জিপিএ-৫ পাওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। কিন্তু সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে বিভাগ পরিবর্তন করা ওইসব শিক্ষার্থী অর্থনীতি বা ইসলামের ইতিহাসের মত বিষয়গুলোতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ অর্জনও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে চলতি বছর জিপিএ-৫ বৃদ্ধির একটি কারণ।’
আরও পড়ুন : এইচএসসিতে কোন বোর্ডে পাসের হার কত?
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এসএসসির ফলের ভিত্তিতে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের বাতিল হওয়া বিষয়গুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। অনেকটা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২০২২ সালের এসএসসি ২ লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে ওই শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতেও ভালো করতে পেরেছেন। তাই জিপিএ-৫ গতবারে চেয়ে অনেকটা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে কোন শিক্ষার্থী ফেল করেননি। ইংরেজি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ বিষয়ে হয়তের কিছু শিক্ষার্থী ফেল করেছেন। এসব কারণে পাসের হার অনেকটা আগের মতই আছে।’
ঢাকা কলেজের এ শিক্ষক আরও বলেন, ‘আসলে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে বহু শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছেন। হয়তো অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে কোন শিক্ষার্থী এসএসসিতে কোন বিষয়ে একটু খারাপ করেছিলেন। তিনি তার উচ্চশিক্ষা জীবন ও কর্মক্ষেত্রের চিন্তায় হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে ভালো করার জন্য পরিশ্রমও করেছিলেন। কিন্তু তারা পরিশ্রমের মূল্যায়ন পাননি। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে তাদের অপ্রাপ্তি রয়েই গেছে।’