১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭

এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: শিক্ষার্থীদের করণীয় কী?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের সব পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব হয়নি। ১৩টি পত্রের মধ্যে সাতটির পরীক্ষা হয়েছিল। বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল করে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করবে বোর্ডগুলো। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ফল প্রকাশ করা হবে। সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা কোথায় পড়বেন তার একটি লক্ষ্য থাকে। এইচএসসির ফল পাওয়ার পর তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ঠিক করা সহজ হয়ে যায়। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। সে কারণে চান্স পাওয়াও বেশ সহজ। তবে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন নিজের করে নেওয়া মোটেও সহজ নয়। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙিক্ষত বিষয়ে ভর্তির জন্য ভালো প্রস্তুতির পাশাপাশি ভাগ্যেরও একটা ব্যাপার আছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছিলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে যে খুব আহামরি প্রস্তুতি ছিল, তা নয়। প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক ঘণ্টা করে প্রস্তুতি নিয়েছি। কোচিংয়ের ক্লাসগুলো নিয়মিত করেছি। তবে কোচিংয়ের পরীক্ষায় শতাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মধ্যে আমার অবস্থান থাকতো ৫০ এরও পরে।’

চলতি সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের তারিখ নির্ধারণ শুরু করবে। এরপর একে একে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এসব তথ্যগুলো নোট রাখতে হবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার সময়সূচি দেখে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নিয়মে পরীক্ষা হতো, সে নিয়মে নেওয়া কোচিংয়ের ওই পরীক্ষায় এভাবে পিছিয়ে থাকা মানে চান্স না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি- আমার মধ্যে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল। তবে আমার সে বিশ্বাস বদলে দিয়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষক আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত কয়েকজন বড় ভাই। তারা আমাকে বলেছিলেন, ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাওয়ার জন্য ভালো প্রস্তুতি জরুরি।’

‘তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা আমাকে বলেছিলেন, সেটি থাকলেই প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। তা হলো, ‘আত্মবিশ্বাস’। এটিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বড় ভূমিকা রেখেছিল আমার ক্ষেত্রে।’ যোগ করেন তিনি।

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের তারিখ নির্ধারণ শুরু করবে। এরপর একে একে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এসব তথ্যগুলো নোট রাখতে হবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার সময়সূচি দেখে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, অনেকে কোচিং কিংবা মডেল টেস্ট পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পারলে আশাহত হন। তারা ভাবেন, তার আর চান্স পাওয়া হবে না। তবে বাস্তবতা হলো- কোচিংয়ের পরীক্ষায় সাধারণত একটু জটিল বা কঠিন টাইপের প্রশ্ন করা হয়। ফলে নম্বর তোলাও কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কোচিং বা মডেল টেস্টের মতো নয়। 

তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয় সবদিক বিবেচনায় নিয়ে। ফলে অতটা জটিল হয় না, প্রশ্ন করা হয় মানসম্মত। সে হিসেবে প্রশ্ন থাকে সহজ, কিন্তু কৌশলী (ট্রিকি)। সে কারণে কোচিং বা মডেল টেস্টের প্রশ্নে হতাশ না হয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়া জরুরি। পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে বসে অনেকে ঘাবড়ে যান। কি প্রশ্ন আসবে? কেমন পরীক্ষা নেবে তারা? আমি চান্স পাব তো? এমন নানা ধরনের প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায় তাদের। 

আরো পড়ুন: সাবজেক্ট ম্যাপিংয়েও কপাল পুড়ছে এইচএসসির লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর

পরীক্ষার আগে এ ধরনের চিন্তা বাদ দেওয়ার বিষয়ে মত সাবেক শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষায় সময় আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। ‘যে প্রশ্নই আসুক, আমি পারব’, এমন মনোভাব রাখতে হবে সবাইকে। বিশ্ববিদ্যালয় তো একটি নয়। অনেকগুলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। একটিতে না হলে আরেকটিতে হবে। ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এভাবে যদি মনমানসিকতা পরীক্ষার আগে স্বাভাবিক রাখা যায়, তাহলে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য। এতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ শুরু হবে আর এক-দু’মাস পরেই। এখন প্রতিটি দিন, প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতিটা এখন ভালোভাবে নিলে আর আত্মবিশ্বাস রাখলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। এমন মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতা বেড়েছে সত্য। তবে অনেক বিষয় আগের চেয়ে সহজও হয়ে গেছে। সেভাবে প্রস্তুতি নিলে সাফল্য আসবে।

এবার এইচএসসি বা সমমানের মোট পরীক্ষার্থী ছিল সাড়ে ১৪ লাখের মতো। মঙ্গলবার ১১টায় স্ব স্ব বোর্ড ফল প্রকাশ করবে। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের পরিসংখ্যান বিতরণ করবেন। শিক্ষাবোর্ডসমূহের ওয়েবসাইট হতে এবং এসএমএস এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় ফলাফল জানতে পারবে।