০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৪৪

এইচএসসির ফল কবে জানে না আন্তঃশিক্ষা বোর্ড

এইচএসসি পরীক্ষার্থী  © সংগৃহীত

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল কবে নাগাদ প্রকাশ করা হবে তা জানেন না শিক্ষা বোর্ডগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফল প্রকাশ কী উপায়ে হবে তা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা এখনও অনুমোদন হয়নি। তাই কবে নাগাদ ফল প্রকাশ হবে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। 

সোমবার রাতে শিক্ষা বোর্ডগুলো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। 

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এইচএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাবনা এখনও অনুমোদিত হয়ে আমাদের কাছে আসেনি। তাই কবে নাগাদ ফল প্রকাশ করা হবে সে বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন, আমরা ওই প্রস্তাবনায় অনুমোদন পেলে ফল প্রকাশে কতদিন লাগবে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ওই বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হলেই সে অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। 

আরও পড়ুন : এইচএসসির ফল অটোপাসে নয়, ফেল করলে ফেলই আসবে

জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের যে প্রস্তাবনা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা প্রস্তুত করেছেন তা ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সে বিষয়ে অনুমোদনের আগে আমরা কোন মন্তব্য করতে পারছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য যেটা মঙ্গলজনক সেভাবেই কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবার পুরো এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব হয়নি। ১৩টি পত্রের মধ্যে সাতটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল করে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে।

এর আগে গত ২১ আগস্ট ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অনুষ্ঠিত এক সভায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল কী উপায়ে প্রস্তুত করা হবে সে বিষয়ে প্রস্তাবনার খসড়া প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম এনালিস্টদের। ওই সভায় অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর নম্বর ও আগের এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রস্তুত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। 

আরও পড়ুন : এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংশোধিত নির্দেশনা, তথ্য চেয়েছে বোর্ড

গত ২০ আগস্ট বিকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। তবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশে ছেড়ে চলে গেলে পুলিশ ও ছাত্র-জনতার মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েকটি থানা পুড়িয়ে দেয়া হয় সেদিন। সেখানেই রক্ষিত ছিল এইচএসসির প্রশ্ন। ফলে বেশ কিছু বিষয়ের প্রশ্ন পুঁড়ে যায় ও অনেকের সামনে চলে আসে। তারপর শিক্ষা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় এক মাস পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষাগুলো নেয়ার। কিন্তু এরপর পরীক্ষার্থীরা বাকি পরীক্ষাগুলো না দেয়ার দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন শুরু করেন। 

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরীক্ষাগুলো বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে গত ২০ আগস্ট দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে সভায় বসেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তখন আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অর্ধেক নম্বরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে পরীক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত জানতে পেরে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা সচিবালয়ে প্রবেশ করে সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশিদের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন সিনিয়র সচিবসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওই কক্ষে ছিলেন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিকালে পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা আসে।