২৬ আগস্ট ২০২৪, ১৩:৩২

এখনও প্রস্তুত হয়নি এইচএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাবনা

এইচএসসি পরীক্ষা  © সংগৃহীত

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের প্রস্তাবনা এখনো প্রস্তুত হয়নি। বেশ কিছু বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো গত ২০ আগস্ট বাতিল ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে কী উপায়ে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে সে বিষয়ে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম এনালিস্টরা। তবে সে প্রস্তাবনা এখনও প্রস্তুত হয়নি। যদিও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাতিল হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলোর ফলাফল ৪০ দিনের মধ্যে প্রস্তুত করে প্রকাশের প্রাথমিক রূপরেখা ঠিক করা হয়েছিল।

সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার। 

তিনি জানান, এইচএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে নানারকম প্রস্তাবনা আমাদের কাছে আসছে। আমরা একদিন বসেছিলাম। প্রস্তাবনাগুলো যাচাই-বাছাই করেছি। তবে এখনও কাজ বাকি। এরমধ্যে শুরু হয়েছে বন্যা। আপাতত আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছি। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে এ প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মহোদয়দের যে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, সেটি এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি। ওই প্রস্তাবনা আসলে যাচাই-বাছাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়, সিনিয়র সচিব মহোদয়ের অনুমোদনক্রমে তা চূড়ান্ত হবে। এরপর চূড়ান্তভাবে বলা যাবে কী উপায়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। 

আরও পড়ুন : অনুষ্ঠিত পরীক্ষার নম্বর ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে এইচএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব করবে বোর্ডগুলো

এর আগে গত ২১ আগস্ট ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অনুষ্ঠিত এক সভায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল কী উপায়ে প্রস্তুত করা হবে সে বিষয়ে প্রস্তাবনার খসড়া প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম এনালিস্টদের। ওই সভায় অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর নম্বর ও আগের এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রস্তুত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। 

গত ২০ আগস্ট বিকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন।

আরও পড়ুন : ‘প্রাণ বাঁচাতেই’ এইচএসসি বাতিলের সিদ্ধান্ত!

গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। তবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশে ছেড়ে চলে গেলে পুলিশ ও ছাত্র-জনতার মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েকটি থানা পুড়িয়ে দেয়া হয় সেদিন। সেখানেই রক্ষিত ছিল এইচএসসির প্রশ্ন। ফলে বেশ কিছু বিষয়ের প্রশ্ন পুঁড়ে যায় ও অনেকের সামনে চলে আসে। তারপর শিক্ষা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় এক মাস পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষাগুলো নেয়ার। কিন্তু এরপর পরীক্ষার্থীরা বাকি পরীক্ষাগুলো না দেয়ার দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন শুরু করেন। 

আরও পড়ুন : এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল চান না ৭৫ শতাংশ

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরীক্ষাগুলো বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে গত ২০ আগস্ট দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে সভায় বসেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তখন আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অর্ধেক নম্বরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে পরীক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত জানতে পেরে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা সচিবালয়ে প্রবেশ করে সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশিদের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন সিনিয়র সচিবসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওই কক্ষে ছিলেন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিকালে পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা আসে।