প্রস্তুতি নিয়েও এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হলো না শাওনের
আজ সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ধাপ অতিক্রম করে পা রাখবেন উচ্চ মাধ্যমিকে। পরবর্তী শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সর্বত্র এসএসসির ফলাফল বিবেচনা করায় এই পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের থাকে ব্যাপক প্রস্তুতি।
এসএসসি পরীক্ষাকে ঘিরে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ন্যায় দীর্ঘ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলো শাওন মন্ডলও। ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়ন টেকনিক্যাল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী সে। তবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে স্বপ্ন ভেঙেছে তাঁর। পরীক্ষার ফী প্রদানসহ সব কাগজ-পত্র জমা দিলেও রেজিস্ট্রেশন হয়নি শাওনের।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয় কতৃপক্ষের ভুলেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে শাওনের। জানা যায়, কৈলাইল গ্রামের প্রাণতুষ্ট মন্ডলের ছেলে শাওন। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল তার। কিন্তু পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েও চারদিন আগে জানতে পারে বোর্ডে তার নিবন্ধনই করেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
শাওন মন্ডল বলেন, আমার সকল সহপাঠীদের মতো আমি স্কুলের বেতন, সেমিস্টার, রেজিস্ট্রেশন ফিসহ সব ধরনের ফি পরিশোধ করেছি। তাহলে আমি কেন পরীক্ষা দিতে পারব না। আমার সব বন্ধুরা এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আমি কি দোষ করলাম। আমার ১০ বছরের স্বপ্ন এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেব।
শাওন আরো বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসের ২২ তারিখে আমাদের এসএসসি ব্যাচের বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়। ঈদের ছুটির পর গত ২৬ এপ্রিল সহপাঠীদের সঙ্গে আমি প্রবেশপত্র আনতে স্কুলে গেলে জানতে পারি আমার প্রবেশপত্র আসেনি। পরে আমাকে জানানো হয় আমার নাকি রেজিস্ট্রেশনই হয়নি।
শাওনের বাবা প্রাণতুষ্ট মন্ডল বলেন, ছেলের মুখে ঘটনা শুনে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন দিলে তিনি আশ্বাস দেন বিষয়টি সমাধান করার। কিন্তু পরদিন আবার ফোন দিলে জানান, এ বছর শাওনের পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আগামী বছর বিনা খরচে শাওনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। কিন্তু ওই স্যার কি আমার ছেলের জীবনের দুই বছর ফিরিয়ে দিতে পারবে।
কৈলাইল টেকনিক্যাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, নবম শ্রেণিতে যখন ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শাওন মন্ডল তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেয়নি। তাকে সময় দেওয়া হয়েছিল, যোগাযোগ করেনি সে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভুলে গেলে আর নিবন্ধন করা হয়নি।
এসময় তিনি আরো বলেন, চূড়ান্তভাবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের তালিকা আসলে শাওন মন্ডলের নাম না থাকার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। আমি বোর্ডে যোগাযোগ করেছিলাম, তবে এ বছর আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। আগামী বছর শাওন পরীক্ষা দিতে পারবে।
প্রধান শিক্ষকের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শাওন বলেন, আমরা কয়েক বন্ধু একসঙ্গেই রেজিস্ট্রেশন ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তবে কয়েকদিন দেরি হয়েছিল। টাকা ও কাগজপত্র যেহেতু জমা নিয়েছে সেহেতু আমি তো নিশ্চিত ছিলাম আমার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। আমার সঙ্গে টাকা ও কাগজপত্র জমা দেওয়া অন্য বন্ধুদের তো সমস্যা হয়নি। তাহলে আমার রেজিস্ট্রেশন কেন হলো না। আর সমস্যা হলে আমাকে কেন বিষয়টি জানানো হলো না স্কুল থেকে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শাহজালাল লিটন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি একবারেই অবগত নই। এখানে একটি ছেলের ভবিষ্যতের বিষয়। আগে জানালে আমি বোর্ডে কথা বলে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে চেষ্টা করতে পারতাম। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।