অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধকে লালন করি, ভবিষ্যতেও করব: অভিনেতা যাহের আলভী
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা যাহের আলভী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন। কয়েকদিন আগে (১৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন নিয়ে তাকে ঘিরে আলোচনা হয়। সেই প্রসঙ্গেই তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন।
যাহের আলভীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
“শেষবারের মত নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করছি আপনাদের কাছে । এর পর এসব নিয়ে আর কোন কথাই বলতে চাই না । ইচ্ছাও নেই । অনেক হয়েছে আসলে । আমার কথা/স্টেটমেন্ট যে যেভাবে খুশি পিক করে তাদের সুবিধামত ব্যবহার করছেন অথবা অপব্যবহার করছেন । তাই লেখাটা মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
আমি অভিনয়শিল্পী। অভিনয় আমার পেশা, নেশা। আমার রুটি-রুজিও। তাহলে আমার স্বভাবতই অভিনয় নিয়ে থাকা উচিত । বোদ্ধারা আমাকে এটিই বলেন । এই কয় দিনে বুঝলাম, আসলেই তাই । অন্ধের শহরে চশমা বিক্রি করে লাভ নেই ।
তাহলে এতদিনের লেখালিখি কি নিয়ে ছিল, কেন ছিল? অনেক মিথ্যা প্রোপাগান্ডা জড়িয়ে অনেক কিছুই তো বলা হলো, যে টাকার বিনিময়ে, আওয়ামী মদদে এসব লিখেছি । আলভীকে টাকা দিয়ে কেনা অসম্ভব, আলভী ভালবাসার কাঙাল, টাকার নয় । ৬৪ জেলায় আমাকে ঘৃণা করার মানুষ যেমন আছেন , বিশ্বাস করেন ভালবাসার মানুষও আছেন । আর যদি রাজনীতি নিয়ে বলি, আমি রাজনীতি নিয়ে ভাবিই না । রাজনীতি আমাকে টানেও না, ভবিষ্যতে এমপি হওয়ারও সাধ নেই। আমি অরাজনৈতিক । নিজেদের সুবিধার্থে আমাকে কোন দলের সাথে জড়াবেন না । কিংবা আমার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াবেন না।
এবার আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রয়াণে শোক পালন প্রঙ্গে। শোক আমি ম্যারাডোনার জন্যও পালন করি, যার ব্যাক্তিজীবন অনেক সমালোচিত। তাই বলে কি আর্জেন্টিনা আমার প্রিয় দল নাকি ? আমার প্রিয় দল ফ্রান্স সেই ৯৮ থেকে আজ অব্দি । শোক আমি মাইকেল জ্যাকসনের জন্যও করি, যার ব্যাক্তিজীবন আরও বেশি সমালোচিত । কিন্তু আমার প্রিয় পপস্টার এলভিস প্রিসলি । শোক আগামীতে আমি বলিউডের সঞ্জয় দত্তকে নিয়েও করব, যার ব্যাক্তিজীবন ভয়ঙ্কর সমালোচিত । কিন্তু আমার প্রিয় নায়ক সালমান খান । শেখ মুজিবকে নিয়ে শোক প্রকাশ করা মানেই আওয়ামী লীগ করা না, জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করা মানেই বিএনপির সাপোর্ট করা না। এর চেয়ে সহজভাবে আর এর ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব না।
তবে , অবশ্যই আমি মুক্তিযুদ্ধকে লালন করি, করবও । মুক্তিযুদ্ধ মানেই আওয়ামী লীগ করা না, মুক্তিযুদ্ধ মানেই ফ্যাসিস্টের দোসর না। মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করলে শেখ মুজিব, জিয়া, সোহরওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানীসহ সকল শহীদ নেতাকেই অস্বীকার করা হবে । যেসকল বিএনপিপন্থী ভাই-বন্ধু নেতা আমি চিনি, কিংবা না চিনি আপনারা কি কেউ একাত্তর অস্বীকার করেছেন ? আমি দেখিনি বা শুনিনি । বেগম খালেদা জিয়াসহ কোন বড় নেতাই কখনো মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করেন না । তাহলে আমি একাত্তরকে লালন করলে কেন আপনারা কেন এত নোংরাভাবে নিজেকে জাহির করেন ? কেনই বা এত ঘৃণার জন্ম নেয় আপনাদের মনে । তবে হ্যাঁ , যারা রাষ্ট্রভাষা উর্দু চেয়েছেন , বা চায় তাদের কথা ভিন্ন। তাদের সাথে কোন তর্কে জড়াব না । ইনফ্যাক্ট এখন থেকে কোন তর্কেই জড়াব না । যে যা চান, সেটা চেয়ে আপনারা ভালো থাকেন, আমিও আমার মতো ভালো থাকি।
একটা কথা এদেশে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত । এখানের কোন ইতিহাস নিরপেক্ষ নয় । ক্ষমতার সাথে সাথে যে যার যার মত করে ইতিহাস বদলায় । তাহলে জনগণ তো নানাভাবে নানা ইতিহাসে বিভক্ত হবেই । আপনার মতের বাইরে, ইতিহাসের বাইরে গেলেই যদি আপনি সহ্য করতে না পারেন অথবা সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন তাহলে তো আপনিও ফ্যাসিস্ট, তাই না?
সব কথার শেষ কথা, এই দেশ শুধু আপনাদের । আপনারা যা ভালো মনে করেন, করেন । বলেন । আজকে থেকে আমার আর কিছুই আসে যায় না । আমার দায়িত্ব আমি পালন করে যাব, আমার জীবন আমি এটা ভেবেই পার করব যে, স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার বড়ই অভাব।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য শুভকামনা।”